• ‘মাধবী মুখ খুললেই ডুববেন মোদি’, সেবি প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভীত কেন্দ্র: কংগ্রেস
    বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শেয়ারবাজার, সেবি এবং কেন্দ্রীয় সরকার— ‘মনোপলি বাঁচাও’ সিন্ডিকেট। বাছাই করা কর্পোরেট। বাছাই করা কোম্পানি। বাছাই করা শেয়ারই শুধু মুনাফা করবে। এবং সেই সুফল লাভ করবে ওই এক এবং একমাত্র সিন্ডিকেট। আর এহেন গোটা চক্রের নিয়ন্ত্রক তথা পরিচালক বসে আছেন দিল্লিতে। সর্বোচ্চ পদে। সেই কারণেই কি সেবি প্রধানের বিরুদ্ধে শেয়ার দুর্নীতির একঝাঁক অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ সামনে এলেও টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করতে পারছে না মোদি সরকার? মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। রাহুল গান্ধীর বিস্ফোরক সওয়াল, ‘মাধবী পুরী বুচ কি সরকারকে ব্ল্যাকমেল করছেন? তাঁকে সরিয়ে দেওয়া তো দূর অস্ত, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সাহসও কেন দেখাতে পারছে না কেন্দ্র তথা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা?’ রাহুলের পাশাপাশি মঙ্গলবার এআইসিসি দপ্তরে তথ্য পরিসংখ্যান দেখিয়ে সরব হলেন কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেড়াও। তাঁর সাফ কথা, মাধবী মুখ খুললেই ডুববেন নরেন্দ্র মোদি। সেবি প্রধান এটা জানেন বলেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তলবও উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারছেন।

    রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও সরাসরি আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। এক্স হ্যান্ডলে তাঁর অভিযোগ, সেবিকে কলুষিত করেছেন মোদি। তবে পবন খেরা আক্রমণ করেছেন আরও সরাসরি। কংগ্রেস মুখপাত্র বলেন, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রকই সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি)। কিন্তু নিছক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রক হয়ে থাকতে চাননি সেবি প্রধান মাধবী পুরী বুচ। বরং শেয়ারবাজারকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে তিনি রীতিমতো মুনাফার নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। কোন সংস্থার শেয়ারের দর কখন বাড়বে, কখন কমবে, কখন কিনতে হবে, কখন ছাড়তে হবে— সব এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। পবন খেড়ার দাবি, মাধবী পুরীকে কেন্দ্রীয় সরকার আসলে কিছুই বলতে পারছে না। তিনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ডাকও উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারছেন। সম্ভবত পরোক্ষে সেবি প্রধান এই বার্তা দিচ্ছেন যে, যদি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সকলকে নিয়ে ডুবব। ফলে ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’র প্রবক্তা নিজে ভয় পেয়েছেন। কারণ, ভারতের শিল্প মানচিত্রে যে মনোপলি সিন্ডিকেট চলে, তার প্রধান মদতদাতা খোদ কেন্দ্রীয় সরকার।

    রাহুল গান্ধী নিজে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বারবার জানতে চেয়েছেন, বিগত বছরগুলিতে কোন কোন সংস্থা বা স্টার্ট আপ সরকারের আর্থিক সহায়তা তথা ভর্তুকি পেয়েছে? জবাবে একটি তালিকা পেশ করেছে মোদি সরকার। পবন খেড়ার অভিযোগ, সেই তালিকা অনুযায়ী সরকারের বিশেষ সহায়তাপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির মধ্যে কয়েকটির লগ্নিকারীদের নাম রয়েছে প্যারাডাইস বা পানামা পেপারে। অর্থাৎ, তারা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিদেশি রাষ্ট্রে টাকা পাচার করেছেন। ঘটনাচক্রে আবার এরকম কয়েকটি সংস্থার শেয়ার কিনেছেন (প্রেডিবল হেল্থ, জেকসা ইনভেস্টমেন্ট ইত্যাদি) মাধবী পুরী। আর আড়াইশো গুণেরও বেশি মুনাফায় সেই সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। পাশাপাশি যে সংস্থার বিরুদ্ধে খোদ সেবি তদন্ত করছে, সেই সংস্থার ব্রোকারেজ ফার্মকেই বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন এক সেবি সদস্য। সেখান থেকে আয় হয়েছে ৬৫ লক্ষ টাকা। 

    একে একে এরকম আরও বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস হবে বলে দাবি কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের। তাঁর প্রশ্ন, কান টানলেই যেখানে মাথা আসবে, সেখানে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? জনতার মনে সন্দেহ বাড়ছে। কারণ, মাথাটা যে কে, সেটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে!
  • Link to this news (বর্তমান)