স্বপ্নাদেশ পেয়ে সুতানুটির জঙ্গলেই বসাকালীর আরাধনা শুরু করেন মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
অতূণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: ১৭১৮ সাল। ৩০০ বছরেরও বেশি আগের সুতানুটি অঞ্চল। ঘন জঙ্গল চারদিকে। সাধক মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেলেন। তারপর সেই মতো অনুসন্ধান চালিয়ে খুঁজে পেলেন মাটির এক মাতৃমূর্তি। সেখানেই মতিলাল শুরু করলেন মাতৃ আরাধনা। পরে স্থানীয় জমিদারের (বর্ধিষ্ণু মিত্র পরিবার) অনুমতি ও সাহায্যে গড়ে উঠল মন্দির। সেখানে আজও সেই মাতৃমূর্তি একইভাবে পুজিত হয়ে আসছে। শিবের ওপর দণ্ডায়মান কালীমূর্তি দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। তবে মতিলাল জঙ্গল থেকে যে মূর্তি পেয়েছিলেন, তা অভিনব। শিবের বুকের উপর পদ্মাসনে বসে রয়েছেন মা কালী। সেই মূর্তি আজও অবিকৃত রয়েছে। বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার বংশানুক্রমে দেবীর সেবা করে আসছে। বর্তমানে অমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যারা ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
উত্তর কলকাতার ছাতুবাবুর বাজারের এই আনন্দময়ী মা বসাকালী নামে সমধিক পরিচিত। নানারকম ফল, চিঁড়ে, দই, মুড়কি, মিষ্টি দিয়ে মায়ের সেবা হয়। প্রতি অমাবস্যায় ভোগ সহ হয় বিশেষ পুজো। শুধুমাত্র মহালয়ায় মাকে লুচি ভোগ নিবেদন করা হয়। কালীপুজোর আগে অঙ্গরাগ শেষে মা সেজে ওঠেন বেনারসি ও সোনার অলঙ্কারে। সেদিন নানা ব্যঞ্জন সহ অড়হর ডালের খিচুড়ি নিবেদন করা হয়। পরের দিন শোল মাছ সহ অন্নভোগ, পায়েস ও মিষ্টি দেওয়া এই মন্দিরের প্রাচীন রীতি। দুর্গাপুজোর সময় সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে বিশেষ পুজো হয় বসাকালী মায়ের। দশমীতে দেওয়া হয় সিদ্ধির সরবত। অম্বুবাচির সময় অধিকাংশ কালীমূর্তিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হলেও এখানে সেই রীতি নেই। সেই সময় তিনদিনই মাকে আম-দুধ দেওয়া হয়। অম্বুবাচি নিবৃত্তিতে আনন্দময়ী মায়ের চুলে পুরোহিত রিঠা ও তেল লাগিয়ে দেন। নতুন কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়। নিবেদন করা হয় নানারকম মাছ সহ অন্নভোগ ও থেতো করা পান।
মূর্তির যেমন অভিনবত্ব রয়েছে, তেমনই অভিনব এখানকার মানত পুজোর রীতিও। মনস্কামনা পূরণের পর জোড়া নারকেল ও বাতাসা সহ মানত পুজো দিতে বহু দূর থেকেও ভক্তরা ছুটে আসেন। মন্দিরের সেবায়েতদের বিশ্বাস, বসাকালী মা প্রতিদিন রাত্রে মন্দিরের মধ্যে হেঁটে বেড়ান। শোনা যায় নুপূরের শব্দ।