মনমোহিনী আলো থেকে জৌলুসের মণ্ডপ, মা কালীর বন্দনায় তৈরি শ্রীরামপুর থেকে বেগমপুর
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: দীপাবলির মৌতাতে মেতে উঠেছে শ্রীরামপুর থেকে বেগমপুর। কোথাও জমজমাট থিমপুজো, তো কোথাও ষাট বছর পেরিয়ে যাওয়া চমক লাগানো হাসপাতালের পুজো। আবার শতবর্ষ পার করা শ্মশানকালীর পুজোকে ঘিরে অন্য মেজাজ স্থানীয় জনপদের। একদিকে মনমোহিনী আলো, অন্যদিকে পুজোর জৌলুস— চোখ ধাঁধাচ্ছে নবজাগরণের শহর বেগমপুরে।
১৯৬৫ সালে চালু হয়েছিল শ্রীরামপুর ইএসআই হাসপাতাল। সেখানকার ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবার মিলে চালু করেছিল কালীপুজো। এবার সেই পুজো ষাট বছরে পা দিয়েছে। বদলেছে সময়, বদলে গিয়েছে দেবীর গায়ের রং, পোশাকের ধরন। শুধু বদলায়নি ইএসআই হাসপাতাল ও সংলগ্ন এলাকার মানুষদের আবেগ। আজ প্রায় সর্বজনীন হয়ে উঠেছে এই পুজো। এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ইএসআই হাসপাতালের কালীপুজো যেমন ঐতিহ্যের স্মারক, তেমনই এক বৃহত্তর মিলনমেলা।
শ্রীরামপুরের বল্লভপুরের শ্মশানকালী পুজোর বয়স ১৭৫ বছর। শ্মশানকালী নাম হলেও স্থানীয়দের কাছে তা সর্বজনীন কালীপুজো। এবার পুজোর আগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেন পুজো উদ্যোক্তারা। তাতে মানুষের যোগদান ছিল নজরকাড়া। শ্মশানকালীর পুজো যেমন প্রাচীন, তেমনই ভয়াল চেহারার কালী প্রতিমাকে ঘিরে আছে হরেক জনশ্রুতি। পুজোয় এখন আর বলি হয় না। তবে অতীতে জলসার আসর বসত। এখনও তা চালু আছে। আর আছে সাবেক রীতিনীতির কঠোর অনুশাসন। পুজোর উদ্যোক্তা পরিষদের সম্পাদক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই পুজো ঐতিহ্য আর আবেগের এক অদ্ভুত সঙ্গম।
এমন সব সাবেক পুজোর মধ্যেই থিমপুজোর বাড়বাড়ন্ত চণ্ডীতলার বেগমপুরে। গত ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে থিম সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকেছে বেগমপুর। সাবেক সর্বজনীনের গায়ে লেগেছে আধুনিকতার পরশ। থিমেও হয়েছে উন্নয়ন, মূর্ত থেকে বিমূর্ত আদল এসেছে। আলোকসজ্জায় এসেছে চমকের পর চমক। হুগলির পাণ্ডুয়া যদি সর্বাধিক কালীপুজোর নগরী হয়, তবে বেগমপুর তাকে টেক্কা দিতে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। এবারও বেগমপুর সেজেছে হরেক থিমের পসরায়। বেগমপুরের অনামিকা ক্লাবের এবারের থিম ‘শক্তিরূপেণ সংস্থিতা’। নারীশক্তির প্রগতির ইতিহাস আর দেবীর মাতৃরূপকে আধার করেই এক আধুনিক থিমের পুজো করছেন উদ্যোক্তারা। দেবী কালী এখানে মায়ের রূপে দেখা দেবেন। আর মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হবে সাবেক থেকে বর্তমান মহান নারীদের স্মৃতিচিহ্ন। থাকছে সরু বাঁশের বিশেষ অলঙ্করণ। ক্লাবের কর্তা কাঞ্চন রীত বলেন, শাঁখা-পলার মোটিফ ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা ভঙ্গিমায় নারীশক্তির প্রকাশকেই আমরা থিম করেছি। কুলো, পাখা, গামছা, গাছকৌটা এমন নানা উপকরণ বাঙালি তাঁর বরণডালায় রাখে। ঘরে অতিথিকে সেসব দিয়েই বরণ করার সাবেক রীতি ছিল। সেই রীতিকেই উস্কে দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছে বেগমপুর রামৃকৃষ্ণ সঙ্ঘ।
ক্লাবকর্তা দিগন্ত দত্ত বলেন, আমাদের পুজো ৫২ বছরে পা দিয়েছে। মণ্ডপসজ্জায় বিশেষ চমক থাকবে। যা দর্শকরা মণ্ডপে এলেই টের পাবেন।