কাটা ছাগমুণ্ড এসে পড়ল ব্রহ্মচারীর কোলে, বলি বন্ধ হল জয় মিত্র বাড়িতে
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: বালানন্দ ব্রহ্মচারী ধ্যানমগ্ন, সমাধিস্থ। মন্দিরে কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে ছাগ বলি। আচমকা বলির ছাগমুণ্ড কালীর সামনে থেকে লাফাতে লাফাতে এসে নাটমন্দিরে বসা ব্রহ্মচারীর হাতে পড়ল। ঠাকুরের অদ্ভুত লীলা দেখে ভক্তরা অভিভূত, আশ্চর্য। বালানন্দের ধ্যান ভগ্ন হল রক্তের স্পর্শে। সটান উঠলেন। বললেন, ‘মা আর বলি চাইছেন না। বন্ধ করার প্রয়োজন।’ পরামর্শ মেনে নিলেন ভীত সেবায়েতরা। বলি বন্ধ করে দেওয়া হল। এরপর থেকেই কোনওদিন বরানগরের জয় মিত্র কালীবাড়িতে বলি হয়নি। বরানগর কুঠিঘাট সংলগ্ন এই কালীবাড়ি বহু প্রাচীন। কালীর লীলা ঘিরে কাহিনির শেষ নেই। তিনি খুব জাগ্রত। তাঁর কাছে প্রায়ই আসতেন রামকৃষ্ণদেব। তিনি এ কালীকে ডাকতেন ‘মাসি’ বলে।
শোভাবাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন জয়নারায়ণ মিত্র। তাঁর টাকা পয়সার অন্ত ছিল না। অসম্ভব ধনী ব্যবসায়ী। বরানগরের কুঠিঘাটে গঙ্গার পাড়ে জমি কিনলেন। তারপর ১২৫৭ সালে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। সিংহদুয়ার তৈরি হল, গঙ্গায় হল কালীর নিজস্ব ঘাট। নহবৎ খানাও করলেন জয় মিত্র। মন্দিরের মধ্যে দু’দিকজুড়ে ১২ শিবমন্দির। সামনে বড়সড় নাটমন্দিরও হল। শোনা যায়, এই মন্দির তৈরির পাঁচ বছর পর দক্ষিণেশ্বরে মন্দির তৈরি হয়। এলাকায় জনশ্রুতি, এটি দেখেই রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কালীবাড়ির পাশ দিয়ে গঙ্গার পাড় বরাবর দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। তখন রামকৃষ্ণদেব থাকছেন কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। যাওয়া আসার সময় মাঝেমধ্যেই এই মন্দিরে আসতেন তিনি। মাকে কৃপাময়ী কালী বলতেন। দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীকে বলতেন মা আর কৃপাময়ীকে মাসি। রামকৃষ্ণের মতোই বালানন্দ ব্রহ্মচারী সহ বহু মনীষী কালীর টানে ছুটে আসতেন। দেবীর কৃপায় ধন্য হন বহু মানুষ।
এখন পুজোয় আগের মতো জাঁকজমক আর নেই। তবে পরম নিষ্ঠায় পুজো হয়। দু’বেলা ঠাকুরের নিত্য সেবা ও আরতি। একইভাবে শিবমন্দিরেও মহাদেবের নিত্য সেবা ও সন্ধ্যায় আরতি। প্রতিদিন সকাল ছ’টায় কালীমন্দির খোলে। দুপুর ১২টায় বন্ধ। এরপর ফের বিকেল চারটে নাগাদ মন্দির খোলে। বন্ধ হয় রাত আটটা। বিশেষ পুজোর দিন গভীর রাত পর্যন্ত মন্দির খোলা। প্রত্যেক অমবস্যায় বিশেষ পুজো হয়। পৌষ মাসে ও কালীপুজোর দিনও বিশেষ পুজো। ১০৮ দীপমালা জ্বালানো হয় ঠাকুরের সামনে। ভোগ সম্পূর্ণ নিরামিষ। মন্দিরের পুরোহিত স্বপন রায় বলেন, ‘১৩০৭ সাল থেকে বলি প্রথা বন্ধ। শুনেছি, বালানন্দ ব্রহ্মচারীর নির্দেশে বলি নিষিদ্ধ হয়েছিল। মায়ের মন্দির দুপুর ও রাতে নিরিবিলি রাখতে হয়। মধ্যরাতে আজও নূপুরের ধ্বনি শোনা যায়।’ -নিজস্ব চিত্র