সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অভয়ার বিচার চেয়ে সংগৃহীত কোটি কোটি টাকার তহবিল নিয়ে তদন্ত এবং সরকারি কমিটিগুলিতে সমানাধিকারের দাবি উঠতেই প্রবল চাপে পড়ে কোণঠাসা অনিকেত-কিঞ্জলদের জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট এবার তাদের ‘বি টিম’-কে আসরে নামাল।
যদিও ৯ আগস্টের পর যখন রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাম-অতি বামের নেতৃত্বে প্রবল আন্দোলন চলছিল, তখন মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করা প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স নামের এই সংগঠন কার্যত ইঁদুরের মতো গর্তে ঢুকেছিল। প্রকাশ্যে পাল্টা আন্দোলন বা রাজ্য সরকার এবং শাসকদলের হয়ে রাস্তায় নামা দূরের কথা, একলাইন বিবৃতিও কোনও সংবাদ মাধ্যমে দিতে দেখা যায়নি ফ্রন্টের ঘনিষ্ঠ এই প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টরদের। এখানেই শেষ নয়, এদিন প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে নিজেদের তৃণমূলপন্থী বলে দাবি করলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে যখন অনিকেত-কিঞ্জলরা কর্মবিরতি চালিয়ে লক্ষ লক্ষ রোগীকে চরম দুর্ভোগে ঠেলে দিয়েছিলেন, তখন এঁরা প্রতিবাদ না করে কেন মুখ বুজে বাম-অতিবামদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন?
জুনিয়র ডাক্তার সংগঠনের অভিযোগ, তদন্ত করে দেখতে হবে অভয়া তহবিলের নামে যে কোটি কোটি টাকা উঠেছে সেখানকার স্পনসরশিপ নিয়েই এই প্রোগ্রেসিভ ডক্টররা আসরে নামলেন কি না? আর জি কর থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে গত আড়াই মাস ধরে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের নামে বাম-অতিবাম সংগঠনের নেতৃত্বে যখন চরম অরাজকতা চলেছে এবং সরকারি চিকিৎসা পরিষেবাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে, তখনও এই প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স সংগঠনের ‘বিপ্লবী’রা কোথায় ছিলেন? এমনই প্রশ্ন ছুড়ে প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন ও বিধায়ক নির্মল মাজির ঘনিষ্ঠ প্রোগ্রেসিভ সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে আক্রমণ করেছেন সরকারপন্থী জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ই-মেল করে আট দফা দাবি তুলে ধরা অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক শ্রীশ চক্রবর্তী পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দাবি করেছেন, অভয়া তহবিলের নামে যে কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছে তার তদন্ত চাইতেই ভয় পেয়ে গিয়ে ফ্রন্টের নেতারা এই ‘চালচুলোহীন’ প্রোগ্রেসিভ ডাক্তারদের নামে জনাকয়েক জুনিয়রকে আসরে নামিয়েছে। এঁরা পুরোপুরি বাম-অতিবামের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের ‘বি টিম’। আর জি কর-সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে যে ‘টেরর কালচার’ অনিকেত-কিঞ্জলরা চালু করেছে এই প্রোগ্রেসিভ নামের ‘বি টিম’তাঁদেরই লেজুড়।
জুনিয়র ডাক্তার সংগঠনের মধ্যে তীব্র টানাপোড়েন শুরুর প্রেক্ষাপটে আজ, বুধবার দুপুরে আর জি কর কাণ্ডে অভয়ার ন্যায়বিচার দ্রুত শুরু করার দাবি নিয়ে শিয়ালদহ কোর্টের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসছে শ্রীশ-অতনুদের সংগঠন। জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য, অভয়া দিদির ঘটনায় যুক্ত বর্বর ও হত্যাকারীদের দ্রুত ফাঁসির দাবিতে শিয়ালদহ আদালতে বিশেষ সিবিআই কোর্টকে সক্রিয় হওয়ার দাবি নিয়ে এই অবস্থান-বিক্ষোভ হবে। কারণ, অভয়ার বাবা-মা এবং আর জি করের ছাত্রছাত্রীদের দাবি মেনে সিবিআই তদন্ত হয়েছে। ৫৮ দিনের মাথায় চার্জশিটও জমা পড়েছে শিয়ালদহের এই বিশেষ সিবিআই কোর্টে। এখন আমরা চাই দ্রুত বিচার শুরু হোক। দ্রুত ফাঁসি দেখতে চাই। অপরাধীদের একজনও যেন ছাড়া না পায়।
উল্লেখ্য, এদিনও শ্রীশ-অতনু-সৌরভ-প্রণয়রা জোর গলায় ফের দাবি করেছেন, ৯ আগস্ট অভয়া দিদির সঙ্গে জঘন্যতম ঘটনা ঘটানোর পর আমরাই প্রথম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছিলাম। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আমরা কাজে যোগ দিয়ে আন্দোলন চালাতে চেয়েছিলাম। তখন এই অনিকেত-দেবাশিসদের জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট কর্মবিরতি চালিয়ে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবাকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে গিয়েছে। লজ্জার কথা, সেই সময় আজকের এই তথাকথিত প্রোগ্রেসিভ ডক্টররা কেউই মুখ খোলেননি, উল্টে এঁদের সুরে সুর মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিপাকে ফেলার প্রচেষ্টায় সঙ্গ দিয়েছে। এদিন প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডাক্তাররা অভিযোগ করেছেন, যাঁরা পাঁচদিন আগে ‘জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভ্য হিসাবে দাবি তুলেছেন, তাঁরা নাকি অভীক-বিরূপাক্ষ ও জেলবন্দি সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ। শুধু তাই নয়, অ্যাসোসিয়েশনের শ্রীশ-প্রণয়-অতনুদের রীতিমতো অনিকেতের ভাষায় ‘ক্রিমিনাল’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস সংগঠনের তরফে রাজীব বিশ্বাস ও ঋতুপর্ণা কয়াল।
এরই জবাবে শ্রীশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রামপুরহাট মেডিক্যালের শেখ শাহবাজ বা বর্ধমান মেডিক্যালের রিজওয়ানূর জামান কি নটোরিয়াস ক্রিমিনাল নয়? শাহবাজের বিরুদ্ধে ডাক্তারি ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা কাণ্ডে এফআইআরে নাম, সহপাঠীকে শ্লীলতাহানি করার ঘটনায় ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যালের সাগ্নিকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ থাকলেও কেন রাজীব বিশ্বাসরা মুখ বন্ধ করে আছেন?’’ আর এর পরই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, অনিকেত-দেবাশিসদের কথাগুলি প্রোগ্রেসিভ সংগঠনের মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বাম-অতিবামদের হাতের পুতুল অনিকেতদের হয়ে আসরে নামা এই তথাকথিত প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডাক্তারদের কি আদৌ শান্তনু-নির্মলরা মদত দেবেন? কারণ, আন্দোলনের নামে আর জি করের এই বাম-অতিবাম ঘনিষ্ঠ ডাক্তাররা গত আড়াই মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং কুৎসা করেছেন। প্রশ্ন সরকারপন্থী জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের।
অন্যদিকে আর জি করে নিজেদের কনভেনশনের সিদ্ধান্ত মেনে আজ, বুধবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দপ্তর ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট। তাঁদের অভিযোগ, সিবিআই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে চাইছে। তাই কলকাতা পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে একমাত্র তাকেই অভিযুক্ত খাড়া করে চার্জশিট দিয়েছে। আমরা ওই চার্জশিট মানি না।
কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে আর জি করে সাসপেন্ড-বহিষ্কার হওয়া ৫৩ জন জুনিয়র ডাক্তারকে ফের হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবায় ফিরিয়ে নিতে বলা হয়। বস্তুত এই ৫৩ জন জুনিয়রের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে একদিকে যেমন অসংখ্য সরকারের সমর্থক চিকিৎসক রয়েছেন, তেমনই অনিকেত-কিঞ্জলরা বিভিন্ন চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্রে ‘টেরর কালচার’ চালু করেছে বলে অভিযোগ করেছে জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে জুনিয়র ডাক্তারদের রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মুখ্যসচিবকে যে আট দফা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তার একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবিই হল, সমস্ত সরকারি কমিটিতে ফ্রন্টের পাশাপাশি অ্যাসোসিয়েশনেরও সদস্যদের সমান সংখ্যায় রাখতে হবে। বস্তুত, কোটি কোটি টাকার অভয়া তহবিলে তদন্তের দাবির পাশাপাশি এই সমানাধিকারের দাবি প্রবল চাপে ফেলে দিয়েছে অনিকেত-দেবাশিসদের। আর সেই কারণে প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন ও নির্মল মাজিদের ঘনিষ্ঠ এই প্রোগ্রেসিভ ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনকে মাঠে নামিয়ে শ্রীশ-অতনু-সৌরভদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়াচ্ছে। কারণ, রামপুরহাট কলেজের ডাক্তারি ছাত্রী মধুমিতা ঘোষ থেকে শুরু করে আর জি করের সৌমিত্র বিশ্বাস হত্যার পুনরায় তদন্ত এবং বিচার চাওয়া বাম সমর্থক ডাক্তার ও তাঁদের নেতাদের চরম বিপাকে ফেলে দিয়েছে।
বস্তুত নয়া সংগঠন জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন আত্মপ্রকাশের পর মাত্র চার দিনেই রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করা আমজনতার মনে জায়গা করে নিয়েছে। কারণ, তাঁরাও অভয়ার ন্যায়বিচারের পাশাপাশি সরকারি চিকিৎসা পরিষেবায় আরও গতি আনার দাবি করেছেন। মুখ্যসচিবকে পাঠানো ই-মেলে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দাবি করা হয়েছে, শুধু চিকিৎসক নন, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী-সহ চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত সমস্ত কর্মীরই নিরাপত্তা চাই। আর এই দাবি উঠতেই শ্রীশ-অতনুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতালগুলির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও।
আর সেই কারণে বিপাকে পড়ে অনিকেত-কিঞ্জলরা এবার আড়াই মাস ধরে ইঁদুরের মতো গর্তে লুকিয়ে থাকা তাঁদের ‘বি টিম’-কে কুৎসা-অপপ্রচার করতে মাঠে নামিয়েছে। কারণ, ফ্রন্টের হয়ে আন্দোলনে নামা ‘বিপ্লবী’ রামপুরহাটের শেখ শাহবাজ থেকে শুরু করে সাগর দত্তর আকাশ রাইদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর নথি এবং অভিযোগ প্রকাশ্যে আনতেই চরম বিপাকে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট।