সারা বছর ধরে চলে মায়ের পুজো। কালীপুজোর দিন চার প্রহরে বিশেষ পুজো। জেলা-সহ বাইরে থেকে প্রচুর ভক্ত উপস্থিত হন এই কালীপুজোর দিনে। ইতিহাস বলে, প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই মাকে স্বপ্নাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক তান্ত্রিক সাধক। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভক্তদের দানের টাকায় তৈরি হয়েছে ক্রংক্রিটের দক্ষিণেশ্বরের আদলে এই মন্দির।
গ্রামের প্রবীণ জয়দেব রায় বলেন, আগে এই গ্রাম ছিল জঙ্গলে ভরা ভয়ংকর নির্জন। গ্রামের পাশেই ছিল কানা নামের এক নদী। নদীর ধারে ওই জঙ্গলে গ্রামবাসীরা মৃতদেহ সৎকার করতে আসত। জানা যায়, এক বছর এখানে এক ঘটনা ঘটে। এই গ্রামেরই বাসিন্দা ব্রাহ্মণ সুবলচন্দ্র রায়ের নয় বছর বয়সি কন্যা আনন্দময়ী ওরফে 'আন্দি'র সেবার অকালমৃত্যু ঘটে। শ্মশানে তার দেহ সৎকার করতে আসেন গ্রামবাসীরা। সেই সময়ে হঠাৎ তুমুল ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। শবদেহ দাহকারীরা তখন আন্দির আধ-জ্বলন্ত দেহ ফেলে পালিয়ে যান। সেই সময় পাশেই জঙ্গলে এক সাধক ধ্যানরত অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে মা স্বপ্নাদেশ দেন, ওই আধ-পোড়া দেহ কবর দিয়ে তার উপর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে! সেই থেকে এই মন্দিরে কবরের উপর পঞ্চমুন্ডীর আসনে অধিষ্ঠাত্রী রয়েছেন মা আনন্দময়ী। পূর্বে ঐ সাধক এই শ্মশানে ডালপালা ও গাছের পাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে মায়ের ঘট স্থাপন করে পুজো করতেন।
এরপর ১২৯৪ বঙ্গাব্দে গ্রামের ব্যাবসায়ী কৈলাস দত্ত মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটা ছোট মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, বেনারস থেকে অষ্টধাতুর মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠাও করেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য চন্দননগরের জমিদার 'সরকার'রা জমি দান করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশের কাশী থেকে পুরোহিত আনার জন্য স্বপ্নে নির্দেশ দিয়েছিলেন মা। সেইমতো কাশী থেকে দ্বিগম্বর চক্রবর্তী নামে এক পুরোহিতকে আনিয়ে শুরু হয় মায়ের পূজার্চনা। পরবর্তীকালে দিগম্বর চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরেরা এই মন্দিরে মায়ের পুজোর দ্বায়িত্ব সামলে আসছেন বহুকাল ধরে।
এই সেদিন, ইংরেজি ২০০৬ সালে ভক্তদের দান থেকে পাওয়া ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এক মন্দির তৈরি করা হয়। মন্দিরের মোট নয়টি চূড়া। মন্দিরের সেবাইত সুখদেব চক্রবর্তী বলেন, প্রাচীন রীতি মেনে মন্দিরের গর্ভগৃহে তাঁদের বংশধররা ছাড়া অপর কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। কালীপুজোর দিনে চারপ্রহরের পুজো হয়। লুচি, খিচুড়ি, পায়েস ছাড়াও ফল দিয়ে মায়ের ভোগের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। প্রথা মেনে আগে ছাগবলি হত। কিন্তু বর্তমানে বলি বন্ধ। পুজোর দিন ফল বলি দেওয়া। মা আনন্দময়ী খুব জাগ্রত বলে কালীপুজোর দিন ছাড়াও অন্যান্য দিনেও বহু ভক্তরা এসে ভিড় জমান এখানে। ২৭, ২৮, ২৯ মাঘে বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয়। শেষদিন হয় অন্নকূটের আয়োজন। মা আনন্দময়ীকে মেয়ে হিসাবে পূজা করা হয় এখানে।