দুটি পা অচল, তবু থেমে নেই পথ চলা! মুর্শিদাবাদ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে ফেরি টফিজুলের
প্রতিদিন | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: দুটো পা কার্যত অচল। তবুও জীবন যুদ্ধে হার মানতে নারাজ মুর্শিদাবাদের টফিজুল শেখ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি তাঁর কর্মজীবনে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে হয়ে বেড়ে ওঠা টফিজুলের। নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। বেঁচে থাকার তাগিদে সকল বাধা-বিপত্তিকে পিছনে ফেলে বেছে নেন কাজ। মনের জোরে শুরু করেন ফেরি ব্যবসা।
জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার কাবিলপুর গ্রামে থাকেন টফিজুল। সুদূর মুর্শিদাবাদ থেকে ৪০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শুরু হয় তাঁর হরেক রকম পণ্যের ফেরি। সবং ব্লকের দশগ্রাম, দেহাটি, থেকে শুরু করে নারায়ণগড় ব্লকের বিভিন্ন এলাকা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন হাঁড়ি, কড়া, খুন্তি-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। গত ৪ বছর ধরে এভাবেই তিনি তিন চাকার বাইক নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। তাঁর উপার্জনেই চলছে সংসার। পরিবারে রয়েছেন বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। এই কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনওমতে তাঁদের পেট চলে। কিন্তু সেই নিয়ে কোনও দুঃখ নেই টফিজুলের। বরং তিনি গর্ববোধ করেন। কারণ কারও কাছে হাত পাততে হয় না।
টফিজুলের কথায়, জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাঁর। দুটি পা প্রায় অচল। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই কাজের প্রতি মনোযোগ ছিল। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার কারণে কোথাও কোনও কাজের সুযোগ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ফেরি ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলায়। বর্তমানে মেদিনীপুরে থাকেন ব্যবসা সূত্রে। কিন্তু পরিবার রয়েছে মুর্শিদাবাদে। প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন ঘরোয়া জিনিসপত্র নিয়ে ফেরি করতে বেরিয়ে পড়েন। আর বিকালে বাড়ি ফিরে যান। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। প্রতি দুমাস অন্তর বাড়ি যান সেই টাকা পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। এই অল্প আয়ের টাকায় খুবই কষ্টে চলে তাঁদের সংসার।
মুর্শিদাবাদের গ্রামে নিজের একটা দোকান থাকলে কাজের নিরাপত্তা পেতেন। কিন্তু সাধ থাকলেও সামর্থ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন পরিশ্রমী এই মানুষটি। টফিজুল আরও বলেন, তাঁর মতো বিশেষভাবে সক্ষমরা সমাজের চোখে অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত। তিনি সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চান না। নিজের কর্মপ্রচেষ্টায় একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চান। তবে সরকারি কোনও সহায়তা পেলে নিজের ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান টফিজুলের।