শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: টার্গেট একশৃঙ্গ গন্ডার। অসমে ব্যর্থ হয়ে এবার ডুয়ার্সের জঙ্গলকে টার্গেট করতে পারে চোরাশিকারীরা। গোয়েন্দা সূত্রে এই খবর পেয়ে ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যান জুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করল বনদপ্তর। সতর্কতা জারি করা হয়েছে গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন একশৃঙ্গ গন্ডারদের দ্বিতীয় ঠিকানা চাপরামারির জঙ্গলেও। বনদপ্তর সূত্রে খবর, সম্প্রতি অসমের দলগাঁও এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে অসম বনবিভাগ ও পুলিশ। ঘটনায় একজন গ্রেপ্তারও হয়।
গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনাধিকারিক দ্বিজো প্রতীম সেন জানান, এই দলটি অসমের ওরাং জাতীয় উদ্যানে ঢুকে গন্ডার শিকারের ছক কষেছিল। যা ভেস্তে যায়। সেই দলের বাকি শিকারীরা এবার ডুয়ার্সের জঙ্গলকে টার্গেট করতে পারে বলে খবর। গোয়েন্দা সূত্রে এই খবর আসার পরই একশৃঙ্গ গন্ডারের বাসভূমি গরুমারা জাতীয় উদ্যানের নিরাপত্তা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বনদপ্তর। শুরু হয়েছে সার্চ অপারেশন। বুধবার অপারেশনের নেতৃত্ব দেন বনাধিকারিক দ্বিজো প্রতীম সেন। চিরুনি তল্লাশিতে নামানো হয় স্নিফার ডগ এবং ড্রোন।
ডুয়ার্সের জঙ্গল উত্তর পূর্বের চোরাশিকারীদের কাছে অপরিচিত ঠিকানা নয়। এর আগে একাধিকবার স্থানীয় ইনফর্মারদের সাহায্য নিয়ে গরুমারা, জলদাপাড়ার জঙ্গলে ঢুকে শিকার করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ২০১৪,২০১৭,২০১৮ তিন বছরে গরুমারার জঙ্গলে ঢুকে চারটি গন্ডার খুন করে খড়গ কেটে নিয়ে পালিয়ে যায় চোরাশিকারীরা। ২০১৭ গরুমারার জঙ্গলে জোড়া গন্ডার খুনের ঘটনায় লিংডং মুয়াং নামে মণিপুরের বাসিন্দা এক চোরাশিকারিকে গ্রেপ্তারও করে বনদপ্তর। ২০১৭ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে গন্ডার শিকার করতে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে গরুমারার জঙ্গলে ঢোকে মুয়াং। দুটো গন্ডার খুন করে খড়গ নিয়ে মণিপুরে পালিয়ে যাওয়ার পথে অসম পুলিশ মুয়াংকে আটক করে। পরে বনদপ্তর মুয়াংকে গ্রেপ্তার করে জলপাইগুড়ি নিয়ে আসে। বর্তমানে জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল জেলে বন্দি এই শিকারি।
বনাধিকারিক দ্বিজো প্রতীম সেন জানান, সে কারণে তল্লাশি অভিযানে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ট্যাক্সিস্ট্যান্ডগুলিকেও নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন বনবস্তি এলাকা, পর্যটক আবাস, হোটেলগুলির উপরেও নজরদারি চলছে। সন্দেহভাজন কাউকে নজরে পড়লেই জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বনকর্মীরা। বনাধিকারিক জানান, উৎসবের এই মরশুমে প্রচুর সংখ্যায় পর্যটক বেড়াতে আসেন। পর্যটকদের ভিড়ে চোরা শিকারীদের মিশে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। সে কারণে সমস্ত রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বনাধিকারিক জানান।