• সভাপতি ছিলেন সুভাষচন্দ্র, ঐতিহ্য আঁকড়ে আজও অমলিন বাঘাযতীনের ক্লাবের পুজো
    বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: পাথুরিয়াঘাটার ২২, যদুলাল মল্লিক রোড। রাস্তা দিয়ে যাঁরা যাতায়াত করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন। চোখ বন্ধ করে করজোড়ে প্রণাম করছেন তাঁরা। আর বিড়বিড় করে বলছেন, ‘জয় বড়কালী’! আকারে সত্যিই তিনি বড়। উচ্চতা ৩০ ফুট। গা ভর্তি সোনার গয়না। বাইরে নিরাপত্তায় রয়েছেন পুলিসকর্মীরা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অদূরে পাথুরিয়াঘাটার বড়কালীর রয়েছে এক প্রাচীন ইতিহাস। বিপ্লবীদের শক্তি আরাধনার গল্প। যে ক্লাবে এই পুজো হয়ে আসছে সেই পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির প্রতিষ্ঠা করেন বিপ্লবী বাঘাযতীন। এমনকী, এই পুজোর দু’বারের সভাপতি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু! আগের মতো আজও এই পুজোয় প্রাচীন ঐতিহ্য অটুট। ব্রিটিশ আমলে যেভাবে বিসর্জন হতো, এখনও সেই একইভাবে বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের হয়। পুরুষদের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি এবং মহিলাদের পরনে শাড়ি।

    পাথুরিয়াঘাটার এই বড়কালী খুবই ‘জাগ্রত’। মায়ের পায়ের ফুল নিতে দূর-দূরান্তের বহু মানুষ এখানে আসেন। পাড়ার প্রত্যেকেই বড়কালীর সামনে দিয়ে পার হলে একবার হলেও মাথা নত করেন। মাতৃপ্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে বিপ্লবীদের গল্প শোনালেন পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির কালচার সেক্রেটারি তথা এলাকার ইতিহাস অনুসন্ধানী ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ১৯০৬-০৭ সালে আমাদের এই পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন বিপ্লবী বাঘাযতীন। এলাকার যুবকদের নিয়ে চলত শরীরচর্চা। অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিল এই সমিতি। কিংসফোর্ডের উপর হামলা হওয়ার পর শুরু হয় আলিপুর বোমা মামলা। সেইসময় অনুশীলন সমিতিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি, এই ব্যায়াম সমিতিও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।

    তিনি বলেন, বাঘাযতীনের মৃত্যুর পর, ১৯২৪-এ আবার এই ব্যায়াম সমিতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। ১৯২৮ সালে শুরু হয় আমাদের কালীপুজো। ১৯৩০ সাল থেকে পরপর দু’বার এই পুজোর সভাপতি ছিলে নেতাজি। এই এলাকা বিপ্লবীদের ঘাঁটি ছিল। স্বাভাবিকভাবেই পুজোর দিনগুলোতে যাতায়াত ছিল বিপ্লবীদের। ৭৩ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে এক ইংরেজ গুপ্তচরকে হত্যা করেন বাঘাযতীন। ইতিহাসের সঙ্গে এই বড়কালীর পুজোর প্রাচীন ঐতিহ্য অটুট আজও।

      -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)