সংবাদদাতা, ঘাটাল: ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে বন্যার জল এখনও নামেনি। দুর্গাপুজোর সময়ে যেমন জলমগ্ন এলাকায় পুজো বহু কমিটিগুলিকে সমস্যা পোহাতে হয়েছিল। ঘাটাল মহকুমার বহু জায়গায় কালীপুজোর আগেও একই চিত্র ধরা পড়ল। ফলে বেশ কিছু পুজো কমিটি আজ কালীপুজো আয়োজন করতে পারছে না। ঘাটাল পুরসভা এলাকাতেই ছোট বড় পুজো নিয়ে ৩০টির মতো কালীপুজো সেভাবে করা যাচ্ছে না। ঘাটাল ব্লক এবং দাসপুর-১ নিয়ে ধরলে সেই সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে। ঘাটাল মহকুমার সেচ ও জলপথ দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মাখাল জানান, দ্রুতগতিতে নদীগুলির জলস্তর কমছে। তবে ঘাটাল মহকুমার প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকার জল পুরোপুরি নামতে এখনও তিন-চারদিন সময় লেগে যাবে।
ঘাটাল মহকুমার শহর ও গ্রামাঞ্চলে কালীপুজো এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। একে ঘিরে বছরের পর বছর ধরে চলে এসেছে আচার-অনুষ্ঠান, যা একদিকে যেমন ঐতিহ্যের প্রতীক, তেমনি স্থানীয় মানুষদের প্রাণের উৎসব। কিন্তু এবছরের বনযা পরিস্থিতির কারণে মানুষের উচ্ছ্বাসে যেন কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। ডানার প্রভাবে ১৮ অক্টোবর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। ফলে এই মহকুমায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। জল কিছুটা কমলেও ঘাটাল শহরের ১২টি ওয়ার্ড, ঘাটাল ব্লকের ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা এবং দাসপুর-১ ব্লকের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ন। কালীপুজোর আগেই মণ্ডপ এলাকা থেকে জল নেমে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু বহু জায়গাতেই কালীপুজো করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। জলাবদ্ধতার জন্য বহু কমিটি ডেকোরেটরের বাঁশ-কাঠ এখনও মণ্ডপ চত্বরে নিয়ে যেতে পারেনি। ঘাটাল শহরের বয়েজ ক্লাব, অজবনগরের প্রগতি সঙ্ঘের মতো বেশ কিছু পুজো কমিটি নামেই পুজো করছেন। পুজোর মণ্ডপ আলো সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কোনও আয়োজনই করছে না।
ঘাটাল ব্লকের হরিশপুর নিউ বয়েস স্টার ক্লাবের কর্মকর্তা সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, পুজোর আগেই জল নেমে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। যেখানে পুজো করার কথা সেখানে এখনও অনেকটা জল। তাই কী করে পুজো করব সেটা নিয়েই ভাবছি।’ মণ্ডপ এলাকায় এখনও অনেকটা জল থাকলেও ঘাটাল শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দ্য হ্যাপি সোলসের কর্মকর্তারা পুজো করার বিষয়ে খুব জেদ ধরে বসেছেন। ওই পুজো কমিটির কর্মকর্তা অঙ্কুর দেবনাথ বলেন, ‘এখনও এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবুও আমরা বন্যার কাছে হার মানতে চাই না। বন্যা পরিস্থিতির যখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে তাই প্রত্যেক বছর যেখানে পুজো হয় সেখানই করব। জলে দাঁড়িয়েই পুজোর আনন্দ উপভোগ করব।’ তবে পুজোর আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়লেও ঘাটালের স্থানীয় বাসিন্দারা আশা হারাননি। যেসব কমিটি পুজো আয়োজন করতে পারছে না তাঁরা ঘরে বসেই বিভিন্ন ভাবে পুজো উদযাপন করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গিয়েছে।