• ভয়! ভূত চতুর্দশীতে বিরসা মুন্ডা হল্ট স্টেশনে পা রাখলেন না কোনও পর্যটক
    বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • উজ্জ্বল পাল, বিষ্ণুপুর: বিষ্ণুপুর-ময়নাপুর রেলপথ চলে গিয়েছে বাসুদেবপুরের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। সেখানেই বছর কুড়ি আগে তৈরি হয়েছিল বিরসা মুন্ডা হল্ট স্টেশন। পাশেই ব্রিটিশদের তৈরি পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্ড। এই স্টেশনে রাতে তো দূরের কথা, দিনমানেও পা পড়ে না কোনও যাত্রীর। শোনা যায় স্টেশনে নাকি ‘তেনারা’ ঘোরাফেরা করেন। স্টেশনের টিকিট কাউন্টারটি ভাঙাচোরা, প্ল্যাটফর্মে আগাছার জঙ্গল। একটা অস্বস্তিকর গা ছমছমে ‘কী হয় কী হয়’ ভাব ঘিরে ধরে এই এলাকায় পা দিলেই। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় অনেক পর্যটক অবশ্য এই পরিবেশের টানেই ঘুরতে আসেন এই স্টেশনে। ভাঙা টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন। কিন্তু বুধবার সেই ধরনের ‘সাহসী’  পর্যটকরাও এড়িয়ে গেলেন এই স্টেশন। কারণ, বুধবার ছিল ‘ভূত চতুদর্শী। লৌকিক বিশ্বাস, এইদিন ভূতেরা জেগে ওঠেন। এদিন ওই স্টেশনের সামনে দিয়ে মোটর সাইকেলে বাসুদেবপুর পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড দেখার জন্য এক যুবক ও এক যুবতী যাচ্ছিলেন। যুবকটি বাইক থামিয়ে সেলফি তোলার আবদার করলেও যুবতী কিছুতেই রাজি হলেন না। জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন, আজ ভূত চতুর্দশী। এদিন ভূতেরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই আর নামব না। পরে কখনও এলে দেখা যাবে। ভূতের অস্তিত্ব তর্কের বিষয়। কিন্তু ভূত না থাকলেও বুনো হাতি আর দুষ্কৃতীর ভয় যে আছে সে বিষয়ে একমত স্থানীয় বাসিন্দা সকলেই। পর্যটকরা সেলফি তুলেই বুনো হাতি আর ভূতের গল্প শুনে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। 

    স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিরসা মুন্ডা স্টেশন চালুর পর দু’-একবছর যাত্রী ওঠানামা করত। কিন্তু গভীর জঙ্গলে অবস্থিত হওয়ায় পরবর্তীকালে স্টেশনটি দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যায়। টিকিট কাউন্টারের জানালা, দরজা খুলে নেওয়া হয়। প্ল্যাটফর্মের বাতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়া হয়। পানীয় জলের টিউবওয়েল উপড়ে ফেলা হয়। এমনকী স্টেশনটি যাতে অন্ধকারে ডুবে থাকে সেজন্য বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারও চুরি করে নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে যাত্রী সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে তা শূন্যে নেমে এসেছে। রেলকর্মীরাও আর ওই স্টেশনে পা দেন না। যদিও ওই লাইনে চলা একটিমাত্র ট্রেন আজও বিরসা মুন্ডা হল্ট পেরনোর সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামে। কিন্তু বুনো হাতি আর দুষ্কৃতীর ভয়ে কোনও যাত্রী নামেও না, ওঠেও না। এভাবেই ধীরে ধীরে জনমানবশূন্য স্টেশনটি ভূতুড়ে অ্যাখ্যা পেয়েছে। অ্যাডভেঞ্চারের জন্য যাঁরা আসেন, তাঁরা অবশ্য স্টেশনের গা ছমছমে পরিবেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। কিন্তু বুধবার কাউকেই সেভাবে স্টেশনে আসতে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান। 

    গত কয়েকবছর ধরে বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক দুলে জঙ্গলে ছাগল চরাতে এসে স্টেশনের টিকিট ঘরটি নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতেন। এ জন্য রেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে সংবর্ধনাও দিয়েছিল। তাঁর কাছেই পর্যটকরা ওই স্টেশনের বিবরণ শুনতেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে মারা গিয়েছেন মানিকবাবু। এদিন বিষ্ণুপুর বাজার থেকে সাইকেলে করে ফিরছিলেন মানিকবাবুর ছেলে স্বদেশ দুলে। তিনি বলেন, বাবা রোজ স্টেশনে থাকায় সাধারণ পর্যটকরা থামতেন। বাবার সঙ্গে কথা বলতেন। এখন তিনি নেই। পর্যটকরা এলেও আর দীর্ঘক্ষণ থাকেন না। 

    ওই গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলা লোহার বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে স্টেশনটি চালুর সময় আমরা এখানে ওঠানামা করতাম। কিন্তু এখন জনমানবশূন্য ওই স্টেশন সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ঢেকে যায়। একদিকে দুষ্কৃতী, অন্যদিকে হাতির ভয়। এছাড়াও ভূতের গল্পও শোনা যায়। সব মিলিয়ে ওই স্টেশনে আর কেউ যায় না। আমরা এখন ট্রেনে উঠতে গেলে বিষ্ণুপুর স্টেশনে চলে যাই।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)