সন্দীপন দত্ত, মালদহ: সালটা ছিল ১৯৩০। অবিভক্ত বাংলায় তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের অত্যাচার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চাই যুব সমাজকে। প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, শারীরিক সক্ষমতা। তৎকালীন বাংলা প্রেসিডেন্সির মালদহে জনাকয়েক বিপ্লবী মানসিকতার যুবক সংঘবদ্ধ হলেন। তাঁদেরই গভীর ভাবনা থেকে তৈরি ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতি। ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই সংগঠিত করতে নিয়মিত শুরু করেন শরীরচর্চা, লাঠি খেলা, কুস্তি। সঙ্গে শুরু হয় শক্তির আরাধনা। ওই বছর কালীপুজোর সূচনা হয় ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতিতে। এবছর তাঁদের ৯৫তম বর্ষ।
সমিতির সভাপতি নটরাজ মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রাচীন রীতি অক্ষুণ্ণ রেখে আজও নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে আমাদের এখানে শক্তির দেবী মা কালী পূজিত হন।
হিন্দু শাস্ত্রমতে অমাবস্যার রাতে কালীপুজোর নিয়ম থাকলেও এখানকার রীতি খানিকটা ভিন্ন। নটরাজবাবু জানান, মহাকালী রূপে মা এখানে চতুর্দশীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রাচীন সেই রীতি মেনেই গত ৯৪ বছর ধরে চতুর্দশীর তিথিতে দুপুরবেলা থেকে আমাদের মহাকালীর পুজো শুরু হয়। আমাদের মহাকালীর দশটি মাথা, দশটি হাত এবং দশটি পা।
শুধু তাই নয়। এখানে তন্ত্রমতে দীক্ষিত তিন সাধক মিলে মহাকালীর পুজো করেন। নটরাজবাবু আরও বলেন, আমাদের মহাকালীর আসনটি পঞ্চমুন্ডির। তাই এখানে সাধক ছাড়া অন্য কেউ বসতে পারবেন না। আজও আমাদের পাঁঠা বলি দিয়ে পুজো হয়। যজ্ঞেরও আয়োজন থাকে।
চমকের এখানেই শেষ নয়। দশমাথা বিশিষ্ট মহাকালীর পায়ের নীচে থাকেন না মহাদেব। তাঁর দশ হাতের মধ্যে বাঁ হাতে প্রথমে থাকে প্রদীপ, তারপর একে একে ধনুক, পদ্ম, কুড়ুল এবং কাটা মুণ্ড। ঠিক একইভাবে মহাকালীর ডান হাতে প্রথমে থাকে চক্র, তারপর গদা, খাঁড়া, ত্রিশূল এবং তির।
এই পুজোকে কেন্দ্র করে চার, পাঁচদিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসর বসে। থাকে নরনারায়ণ সেবার এক বিশাল আয়োজন। ভাইফোঁটার পরে ভালো দিন দেখে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সারা বছর বেদিতেই মহাকালীর পুজো করি আমরা।
বুধবার সকালে প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে মন্দিরে। ঢাক, ঢোল, কাঁসর বাজিয়ে জাঁকজমক করে মহাকালী আসেন মন্দিরে। মহাকালীর মন্দিরে আগমনকে ঘিরে এদিন শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। যেখানে অনেকেই অংশগ্রহণ করেন।
এদিন বিকেল থেকেই ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতির মন্দিরে ভিড় জমাতে শুরু করেন ভক্তরা। চতুর্দশীর দুপুর থেকে মহাকালীর পুজো দেখতে আসেন অনেকে ইংলিশবাজার শহরের পাশাপাশি পুরাতন মালদহ, কোতোয়ালি, যদুপুর সহ আশেপাশের অঞ্চলের বহু মানুষ। পুজো চলে অনেক রাত পর্যন্ত। - নিজস্ব চিত্র।