নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: গ্রামীণ এলাকায় রাজ আমলের সুপ্রাচীন কালীমন্দির। সারা বছর ভক্তিভরে চলে পুজো। নিয়ম মেনে হয় বলিও। কোচবিহার জেলার নানা প্রান্তে রাজ আমলের এমনই নানা মন্দির, স্থাপত্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তেমনই কোচবিহারের নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের জিরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোঁসাইগঞ্জের বামাকালী মন্দিরের পুজো সুপ্রাচীন একটি পুজো।
আনুমানিক আড়াইশো বছর ধরে এখানে বামাকালীর পুজো হয়ে আসছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। কোচবিহার রাজ আমলের প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরে অষ্টধাতুর বামাকালীর বিগ্রহ রয়েছে। এছাড়াও পিতলের ডাকিনী যোগিনী, দু’টি পিতলের শেয়াল রয়েছে। মা এখানে নিত্য পূজিতা হন। প্রতিবছর কালীপুজোর সময়ে এখানে সাড়ম্বরে বামাকালীর পুজো হয়। বিরাট জাঁকজমক না হলেও প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় যুগ যুগ ধরে প্রাচীন রীতি নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে পুজোটি হয়ে আসছে। কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে রয়েছে মন্দিরটি।
বামাকালী মন্দিরের পূজারী শঙ্কর দেবশর্মা বলেন, প্রাচীন রীতি নীতি মেনেই এখানে পুজো হয়। এখানে বলির প্রচলন রয়েছে। সারা বছর মায়ের নিত্যপুজো হয়। আমরা বংশ পরম্পরায় এই পুজো করে আসছি। কোচবিহারের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক দেবব্রত চাকি বলেন, মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ তোর্সা নদী দিয়ে যাওয়ার সময় এই মন্দিরের খোঁজ পান। এর পরেই বামাকালীর মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেখানে যে দেবস্থান রয়েছে তা আরও প্রাচীন বলে মনে করা হয়। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ও ভাবাবেগ এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ অসম থেকে বামাকালীর পুজো করার জন্য বর্তমান পুরোহিতদের পূর্বপুরুষকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
কথিত আছে, দেবীর ইচ্ছা অনুসারে মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দেশ পেয়েই সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোচবিহার থেকে দেওয়ানহাট পৌঁছে সেখান থেকে বলরামপুর যাওয়ার পথে বাঁ দিকে গোঁসাইগঞ্জের বেলতলা এলাকায় মন্দিরটি রয়েছে। দেওয়ানহাট থেকে গোঁসাঁইগঞ্জের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। জানা গিয়েছে, এখানে পাঁঠা ও পায়রা বলি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। এছাড়াও কালীপুজোর দিন খিচুড়ি ও পায়েস দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। - নিজস্ব চিত্র