মূর্তি-পুরোহিত কিছুই নেই, প্রকাণ্ড অশ্বত্থ গাছকে দেবী রূপে আরাধনা
বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: বারাসত শহরে রঘু ডাকাতের কালীপুজোর গল্প আজও লোকমুখে ফেরে। শহরের তিন কিলোমিটার দূরে জরাজীর্ণ ডাকাত কালীবাড়ি। তাতে পুরনো দিনের ইট এখন খসে খসে পড়ছে। তবে বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ্য করেও টিকে রয়েছে মন্দিরটি। সেটিকে ঘিরে রেখেছে প্রকাণ্ড একটি বটগাছ। লোকমুখে শোনা যায়, মন্দিরটির বয়স কম করে ৫০০ বছর। রঘু ডাকাত ও তাঁর শাগরেদরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মন্দিরে আসতেন। কালীকে পুজো দিতেন। একটি অশ্বত্থ গাছকে মা কালীর রূপ হিসেবে পুজো করা হতো। সবাই বিশ্বাস করতেন, অশ্বত্থ গাছটিই মা কালী। ডাকাতি করার আগে গাছের কাছে মায়ের আশীর্বাদ নিতে যেতেন রঘুরা। ফিরে এসেও পুজো দিতেন।
কাঠোর রোডের রঘু ডাকাতের এই কালীমন্দিরে এখনও কোনও পুরোহিত থাকে না। ভক্তরা নিজেরাই পুজোর কাজ করে নেন। সোমনাথ ব্রহ্মচারী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘রঘু ডাকাতরা এই কালীবাড়িতে মূর্তিপুজো করতেন না। বিশাল ওই অশ্বত্থ গাছকে তাঁরা মা কালীর রূপ ধরে নিয়ে ভক্তিভরে আরাধনা করতেন। সেই প্রথা এখনও চলছে।’ মন্দিরের মূল দরজার বাঁ দিকে শিকড় দেখা যায়। ভক্তরা সেখানেই পুজো দেন এখন। দূরদূরান্ত থেকেও আসেন বহু ভক্ত। প্রত্যেকেই অশ্বত্থ গাছের নীচে পুজো দিয়ে মানত করে যান। সকলেরই বিশ্বাস, প্রত্যেকের ইচ্ছাপূরণ করেন মা।
রঘু ডাকাতের রবিন হুড ধরনের ইমেজ ছিল। ধনী বাড়িতে চুরি করে গরীবদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করতেন তিনি। এই গাছের নীচে বসে ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন। তারপর পুজো দিয়ে বেরতেন হামলা করতে। এই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মানস দিগার। তিনি বলেন, ‘গাছের যে অংশটিকে পুজো করা হয় সেটিও মানুষর শরীরের মতো দেখতে। তাতে মানব নাভির চিহ্ন সুস্পষ্ট। যত দিন যাচ্ছে হাতের ছাপ ও নাভির চিহ্ন আরও স্পষ্ট হচ্ছে।’ কালীপুজোয় সারারাত ধরে পুজো হয়।