নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: বছরখানেক আগেও আগুন লেগেছিল দত্তপুকুরের চণ্ডীগড়ির পেট্রল-ডিজেল শোধনের কারখানায়। সেবার অবশ্য ঘটনার বীভৎসতা এতটা ছিল না। কিন্তু তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, দাহ্য পদার্থ ঠাসা কারখানার নিজস্ব অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে তো? বুধবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেই ঘটনা থেকে কোনও শিক্ষা নেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তারই মাশুল দিতে হল প্রাণের বিনিময়ে। এলাকাবাসীর দাবি, ওই কারখানার ভিতরে থাকা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে বহুদিন। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার দুপুরে চণ্ডীগড়ির ওই কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গভীর রাত পর্যন্ত লড়াই চালাতে হয় দমকল কর্মীদের। পাঁচটি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টা ধরে টানা চেষ্টা চালালেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। এক সময় দু’টি পাম্প বসিয়ে জল দেওয়া শুরু হয়। তাতেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি আগুন।
ঘটনার পর একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এবার যেখানে আগুন লেগেছে, তার ঠিক পাশেই বছরখানেক আগে অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল। এতটা ভয়ানক না হলেও সেই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁদের অভিযোগ, কারখানার বিভিন্ন জায়গায় স্রেফ লোক দেখাতে বসানো রয়েছে বেশ কয়েকটি অগ্নি নির্বাপক মেশিন (ফায়ার এক্সটিংগুইসার)। সেগুলির গায়েই মেয়াদ লেখা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, মেশিনগুলির মেয়াদ ফুরিয়েছে। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বেহাল অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দমকল কর্মীও। তাঁদের কথায়, ‘এই ব্যবস্থা ঠিক থাকলে আমাদের কাজ করতে অনেকটা সুবিধা হতো।’ স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, ‘গতবারের ছোট অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি কর্তৃপক্ষ সজাগ হতো, তাহলে এরকম ভয়ঙ্কর ঘটনা কিছুতেই ঘটত না আবার।’ প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকলেও এমন ঘটনা ঘটত না বলে মনে করছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা রেবা মণ্ডল বলেন, ‘বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আমাদের বাড়ি কেঁপে ওঠে। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। সরকারি অনুমোদন নিয়েই তো চলছে কারখানাটি। তাহলে কারখানার নিরাপত্তা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন রয়েছে, সেসব দিকে প্রশাসন কেন নজর দেবে না?’ শেখ রাজু নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘রাত ৯টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কারখানার দেওয়াল কেটে আগুন নেভাতে হচ্ছে। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন ছিল, তা পুলিস ও দমকলের খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা দেখলাম, বেশ কয়েকটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে।’ তবে এ বিষয়ে কারখানার ম্যানেজার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দমকল বিভাগের তরফে সবদিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।