নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: গত বছরের ২৭ আগস্ট ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল দত্তপুকুরের মোচপোল। অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছিল অনেকের। বুধবার আরও এক ভয়াবহ বিস্ফোরণের সাক্ষী থাকল সেই দত্তপুকুর। এবারের ঘটনাস্থল এই থানা এলাকার চণ্ডীগড়ি গ্রাম। পেট্রল ও ডিজেল শোধনের একটি কারখানায় এদিন বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় কারখানার এক কর্মীর। পুলিস জানিয়েছে, তাঁর নাম বিশ্বনাথ বসু (৫০)। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও তিনজন। তাঁদের মধ্যে জয়দেব কর্মকার ও শের আলি নামে ষাটোর্ধ্ব দুই শ্রমিককে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন কারখানার মালিকের জামাই কুলদীপ সিং। তাঁর অবস্থাও সঙ্কটজনক। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন ও দু’টি পাম্পের সাহায্যে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। এই খবর লেখা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানা গিয়েছে।
দত্তপুকুরের কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের চণ্ডীগড়ি গ্রামে রয়েছে ‘বসু’জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েল অ্যান্ড কেমিকেল’ নামে একটি কারখানা। সেখানে মূলত পেট্রল ও ডিজেল শোধন করে আরও উন্নত মানের করা হয়। ২০০৩ সাল থেকে চলছে কারখানাটি। এদিন দুপুরে তিনজন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কারখানাতেই ছিলেন মালিক সুশান্ত বসুর জামাই কুলদীপ সিং। সবকিছু স্বাভাবিক ছন্দেই চলছিল। বেলা ২.৩০টা নাগাদ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, কারখানায় প্রায় ২০ হাজার লিটার পেট্রল ছাড়াও নানা দাহ্য সামগ্রী ঠাসা ছিল। বিস্ফোরণের কারণে কারখানার ভিতরে আটকে পড়েন তিন শ্রমিক ও কুলদীপ। আগুন দেখে চিৎকার শুরু করে দেন নিরাপত্তারক্ষী মদন রজক। স্থানীয়রাই প্রথমে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। মুহূর্তের মধ্যে আগুন বিধ্বংসী রূপ নেয়। কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ঢেকে যায় গোটা এলাকা। দত্তপুকুর থানার পুলিস ও দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন কাজ শুরু করে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা বিশ্বনাথবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘প্রত্যেকের অবস্থাই সঙ্কটজনক। ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে।’ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তথা কারখানার নিরাপত্তারক্ষী মদন রজক বলেন, ‘বড় বিপদ ঘটে গিয়েছে বুঝতে পেরে দ্রুত গেট খুলে বেরিয়ে আসি। নাহলে আমিও পুড়ে যেতাম।’ এদিনই অকুস্থলে আসেন বারাসত পুলিস জেলার এসপি প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া। তিনি বলেন, ‘কী কারণে এই ঘটনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজন চিকিৎসাধীন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, ট্যাঙ্কারে অনেক পেট্রল রয়েছে।’ দমকলের উত্তর ২৪ পরগনার ডিভিশনাল অফিসার সরোজকুমার বাগ বলেন, ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’