• নিখোঁজ কিশোরের দেহ শনাক্ত ১৯ দিন পরে, পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ
    আনন্দবাজার | ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • সপ্তমীর দিন বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল হাওড়ার নিশ্চিন্দার বাসিন্দা, ১৭ বছরের সায়ন নন্দী। প্রায় ১৯ দিন পরে হাওড়ার পুলিশ মর্গে দেহ মিলল তার। এত দিনেও খোঁজ না মেলায় মঙ্গলবার পরিবারের লোকজন পুলিশের সঙ্গে সায়নকে খুঁজতে বেরোন। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, শনাক্ত না হওয়া এক কিশোরের দেহ পড়ে রয়েছে পুলিশ মর্গে। এর পরে সেই মর্গে গিয়ে তাঁরা দেখেন, সেই দেহ সায়নেরই। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমি ও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে মৃতের পরিবার।

    প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, গত ১১ তারিখ সকালে বালি ও বেলুড় স্টেশনের মাঝে রেললাইন থেকে ওই কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি উদ্ধার করেছিল বেলুড় জিআরপি। কিন্তু মৃতের পরিচয় জানতে না পারায় দেহ শনাক্ত করানো যায়নি। পুলিশের ধারণা, ট্রেন থেকে কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে তবেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

    তবে, মৃত্যুর কারণ ঘিরে এখনও ধোঁয়াশা থাকায় সায়নের পরিবার ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি তুলেছে। সায়নের পরিজনদের প্রশ্ন, ১১ তারিখ দেহ উদ্ধারের পরে সে খবর এত দিনেও কেন পেল না পুলিশ? রেল পুলিশের সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের এত অভাব কেন? এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সায়নের বাবা বিষ্ণু নন্দী বুধবার বলেন, ‘‘সপ্তমীর রাতে ১১টা নাগাদ ছেলে শেষ বার ফোন করে জানিয়েছিল, ও শ্রীরামপুরে আছে। রাতেই বাড়ি ফিরবে। কিন্তু তার পরে ওর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আর যোগাযোগ করা যায়নি। অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মর্গে গিয়ে দেখলাম, সেখানে ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল এবং পুলিশ কেন এত দিনেও খোঁজ পেল না, কিছুরই উত্তর নেই।’’

    হাওড়া সিটি পুলিশের অবশ্য দাবি, প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় সায়নের ছবি ও মেসেজ পাঠানো হয়েছিল। নিয়মিত তল্লাশিও চালানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, রেললাইন থেকে উদ্ধারের পরে জিআরপি এত দিন মৃতের পরিচয় জানতে না পারায় দেহটি মর্গে পাঠিয়ে দিয়েছিল। মঙ্গলবার নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ কিশোরের পরিবারের সঙ্গে খুঁজতে বেরিয়ে দেহটি শনাক্ত করিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, অষ্টমীর সকালে যখন রেললাইনের ধার থেকে সায়নের দেহ পাওয়া যায়, তখন তার কাছে মোবাইল ফোন ছিল না। পকেটে ছিল ১১০ টাকা ও ট্রেনের হাওড়া স্টেশন-শ্রীরামপুর আপ-ডাউন টিকিট। এ ছাড়া আর কিছু না থাকায় জিআরপি দেহটি শনাক্ত করতে পারেনি। তাই দেহটি মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেহ উদ্ধারের পরে দেখা যায়, সায়নের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

    এ দিন ওই কিশোরের পরিবারের তরফে জানানো হয়, সপ্তমীর রাত থেকে প্রতিদিন অনেক খুঁজেও সায়নকে পাওয়া যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার সকালে নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ আধিকারিকেরা তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বেরোন। বিভিন্ন থানা ও জিআরপি-তে খোঁজ নিতে গিয়ে অবশেষে বেলুড় জিআরপি-র তরফে পুলিশ মর্গে পড়ে থাকা দেহটির কথা জানা যায়। সন্ধ্যায় সেখানে গিয়েই মেলে সায়নের দেহ।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)