• নরবলির অপরাধে ফাঁসি হয়েছিল কাপালিকের, আজও মুসলিম যুবকের আনা ফুলে পুজো পান দেবী
    বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কালীপুজোর রাতে একসময় নরবলি হয়েছিল জলপাইগুড়িতে দেবী চৌধুরানির মন্দিরে। আর সেই অপরাধে জলপাইগুড়ি জেলে ফাঁসি হয় মন্দিরের সেই সময়কার সাধক নয়ন কাপালিকের। ব্রিটিশ আমলের সেই ঘটনা আজও নাড়া দেয় শহরবাসীর মনে। ১৮৯০ সালের ওই ঘটনার পর মন্দিরে বন্ধ হয়ে যায় নরবলিপ্রথা।

    তবে আজও একটি রীতি চালু রয়েছে এই পুজোয়। মুসলিম যুবক নিজামের এনে দেওয়া ফুলেই পুজো হয় মায়ের। ভোগের আয়োজনও করেন তিনি। শোল ও বোয়াল মাছের রান্না করা পদে ভোগ দেওয়া হয় মাকে। খিচুড়ি নয়, দেবীর সামনে নিবেদন করা হয় সাদা ভাত। সঙ্গে পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি। পুজো হয় তন্ত্রমতে। করণবারি দিয়ে স্নান করানো হয় মাকে। পুজোয় অংশ নেন চা বাগানের আদিবাসীরা। মনস্কামনা পূরণে পায়রা, হাঁস উৎসর্গ করেন তাঁরা। সঙ্গে নিয়ে আসেন জিলাপি, বাতাসা, চিঁড়ে, দই। ভোগে থাকে সেসবও।

    শোনা যায়, জলপাইগুড়ির রাজা দর্পদেব রায়কত আদিবাসীদের নিয়ে গোশালা মোড়ে জঙ্গলের মধ্যে এই পুজো শুরু করেন। তখন পুজোর রাতেই প্রতিমা তৈরি হত। পুজোর পর তা বিসর্জন হয়ে যেত পরদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই। পরে এই পুজোতে যোগ দেন দেবী চৌধুরানি। ময়নাগুড়িতে তিস্তার চরে ঢুসা বন্দাবাড়ি এলাকায় দেবী চৌধুরানির ধন ভাণ্ডার ছিল। বার্নিশ ঘাট থেকে বজরায় চেপে তিস্তা নদী দিয়ে জলপাইগুড়ি আসতেন তিনি। শিকাশরপুরে ভবানি পাঠকের ডেরায় যাওয়ার পথে ঢুঁ মেরে যেতেন গোশালা মোড়ে রুকরুকা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই মন্দিরে। লুটের সম্পদ বিলিয়ে দিতেন এলাকার আদিবাসীদের মধ্যে। তখন রুকরুকা নদীর সঙ্গে যোগ ছিল করলা নদীর। আর করলার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল তিস্তার। সেই ইতিহাস আজও ফেরে স্থানীয় লোকের মুখে মুখে। আজও পুজো উপলক্ষ্যে আনন্দে মেতে ওঠেন স্থানীয়রা।
  • Link to this news (বর্তমান)