প্রাচীন মন্দিরগুলিতে ভক্তের ঢল, বারোয়ারি পুজোগুলিতে
বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শক্তির আরাধনায় জমজমাট হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন মন্দিরগুলি। বহরমপুরের বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি, দয়াময়ী মা, গোরাবাজারে শ্মশানকালী, নতুন বাজারের জয় কালীবাড়ি, গোকর্ণের শ্যামরায় কালী থেকে শুরু করে নবগ্রামে কিরীটেশ্বরী— প্রতিটি মন্দিরে দুপুর থেকেই পুণ্যার্থীর ভিড় জমে। প্রতিটি মন্দিরের সামনে জবার মালা, ফুল, বেলপাতা, মিষ্টি ও পাঁচরকম ফল বিক্রি করতে বসেন ব্যবসায়ীরা। মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতিটি প্রাচীন মন্দিরের মাহাত্ম্য আলাদা। সেগুলি নানা কাহিনিও শোনা যায়। দীপান্বিতা অমাবস্যায় এইসব পুজো ঘিরে মানুষের আবেগ লক্ষ্য করা গেল।
কান্দির গোকর্ণের শ্যামরায় কালী অত্যন্ত জাগ্রত বলেই পরিচিত। পুজোর দিন গোটা গ্রামে চল্লিশটির বেশি কালীপুজো হয়। এদিন রাতে শতাধিক পাঁঠাবলি হয়। মুর্শিদাবাদ জেলা তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই মন্দিরে মানত করেন। কান্দি মহকুমারই খড়গ্রামের এড়োয়ালি মায়ের মন্দিরও বহু প্রাচীন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বহু জায়গা থেকে গাড়ি করে মানুষ পুজো দিতে আসেন। জেলার বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরে দেবীর আরাধনা উপলক্ষ্যে বাড়তি পুলিস মোতায়েন করতে হয়। কারণ অনেক দেবীমূর্তির অঙ্গে থাকে কেজি কেজি সোনার গয়না।
বহরমপুরে বিষ্ণুপুর কালীমন্দিরে পুজো দিতে এসে শান্তনু দত্ত বলেন, এখানে মা খুব জাগ্রত। এই পুজোর ইতিহাসও বেশ চর্চিত। প্রতি কালীপুজোয় পরিবার নিয়ে এখানে পুজো দিয়ে যাই। মন্দিরে ঢুকলে মন শান্ত হয়। মা সারা বছর আমাদের রক্ষা করেন।
মন্দিরের পুরোহিত বীতশোক পান্ডে বলেন, প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ কালীপুজোর রাতে পুজো দিতে এসেছিলেন। বিকেল থেকেই লাইন পড়ে যায়। সুষ্ঠুভাবে যাতে মানুষ পুজো দিতে পারেন সেজন্য আমরা বহু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি। সারারাত পুজো হয়। সকাল বেলা থেকে ভোগ বিতরণ হয়েছে।
গোকর্ণ মন্দিরের সেবায়েত পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলেন, ৪৩ বছর ধরে আমি শ্যামরায় মন্দিরে পুজো করছি। টর্নেডো বয়ে যাওয়ার পর এই এলাকায় অনেক ক্ষতি হয়। তবে মন্দির ও মন্দিরের আশেপাশের গাছের একটি পাতাও পড়েনি। প্রতি বছর কার্তিক মাসে দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে মন্দিরের এই পুজো বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণভাবে করা হয়। বলিদান, চণ্ডীপাঠ, ভোগরাগ ও প্রসাদ বিতরণ হয়ে থাকে। পল্লিবাসীরা সবাই এখানে হাজির হন। এখানে প্রচুর পাঁঠাবলি হয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মায়ের কাছে। মায়ের কাছে শুদ্ধ মনে প্রার্থনা করলে তা সফল হয়। কালীপুজোর সময় যাঁরা আসতে পারেন না, এমন বহু ভক্ত এখানে নিত্যপুজো ও ভোগ দিতে আসেন।
জেলার একমাত্র সতীপীঠ কিরীটিশ্বরীতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মানুষের ঢল নামে। পুজো উপলক্ষ্যে মন্দির সংলগ্ন মাঠেও মেলা বসেছে। তিনদিন ধরে চলবে উৎসব। এলাকার বাসিন্দাদের আত্মীয়রাও দূর দূরান্ত থেকে এইসময় গ্রামে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা অনুপকুমার দাস বলেন, কালীপুজোই আমাদের এখানে প্রধান উৎসব। আত্মীয়স্বজনরা সকলে গ্রামে আসেন। মায়ের মন্দিরে পূজো দেওয়া হয়। বুধবার থেকেই এখানে উৎসবের চেহারা নেয়। বৃহস্পতিবার গোটা গ্রাম রাত জেগেছে। প্রাচীন মন্দিরের পাশাপাশি শহরে বেশ বড় বড় বারোয়ারি কালীপুজোর আয়োজন হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শহরের প্রতিটি প্রান্তই ভিড়ে জমজমাট ছিল।