নিজস্ব প্রতিনিধি, খড়গপুর: বৃহস্পতিবার সারা দেশের সঙ্গে রেল শহর খড়গপুরও মেতে ওঠে আলোর উৎসবে। কিন্তু সারা শহরের মানুষ যখন আলোর উৎসবকে ঘিরে মাতোয়ারা। ঠিক তখনই খড়গপুর শহরের একটি এলাকার মানুষ অন্ধকারে ডুবে। তাই এলাকার আট থেকে আশি সকলের মন খারাপ। ছবিটা খড়গপুর পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বড় আইমা রামনগর এলাকার। এই পরিস্থিতিতে শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা নয়, স্বয়ং বিজেপির কাউন্সিলার মমতা দাসও ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাঁর বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি, দলের নেতারা মানুষকে ঠকিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দীপাবলি আসে, যায়। কিন্তু এলাকায় আলো আর আসে না। তাই আলোর উৎসবের দিনও অন্ধকারে ঢেকে থাকে গোটা এলাকা।
৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলার বলেন, রেলের জায়গা বলে এনওসি পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে ওই এলাকার মানুষ ব্যাপক সমস্যায় রয়েছেন। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে ওই এলাকার পড়ুয়াদের। আলোর উৎসবের সময় মানুষগুলো অন্ধকারে আছে। আমি রেলের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। শুধু তাই নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী, রেল মন্ত্রী, প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ, বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তাঁরা ভোটের আগে মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট মিটলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
এদিন স্থানীয় বাসিন্দা রাকেশলাল সাহু বলেন, গোটা এলাকা সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকারে ডুবে যায়। সেই সময়ে একমাত্র ভরসা সৌরশক্তি চালিত বাতি। বৃষ্টি হলে সোলার একেবারেই কাজ করে না। দিনের পর দিন অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ভোট এলেই আলো ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। কিন্তু ভোট মিটে গেলেই অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা এলাকা।
প্রসঙ্গত, বড় আইমা রামনগর এলাকায় প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বসতি গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরেই রেলের জায়গাতেই প্রায় ২৬০টি পরিবারের বসবাস। রেলের জায়গা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি এলাকার মানুষ। এর ফলে সমস্যায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ। ভোট এলেই প্রার্থীরা বিদ্যুৎ সংযোগের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর পূরণ হয় না। জানা গিয়েছে, এলাকার মানুষকে কুয়োর জল খেয়েই কাটাতে হয়। এলাকায় রাস্তাও বেহাল। বৃষ্টির সময়ে যাতায়াতে সমস্যা হয় সাধারণ মানুষের।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রতিবছর ভোটের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। দিলীপ ঘোষ থেকে প্রথম সারির বিজেপি নেতৃত্ব বহুবার এলাকায় এসে সমস্যার সমাধানের বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু ভোট মিটলে তাঁদের আর পাত্তা পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার অফিসে গেলে বলা হয়, রেলের অনুমতি লাগবে। আর রেল কিছুতেই নো অবজেকশন লেটার দিচ্ছে না।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও স্কুল পড়ুয়া রুবি সাহু ও প্রার্থনা সাহু বলে, পড়াশোনা করতে খুবই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। সন্ধ্যা নামতেই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় পরীক্ষার সময়। সোলার লাইটে পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু কম আলোতে বই পড়া খুব কঠিন। চোখ ব্যথা করে। জানি না, এই সমস্যার সমাধান কবে হবে। এদিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মেদিনীপুর বিধানসভার উপ নির্বাচনের প্রার্থী সুজয় হাজরা বলেন, বিজেপি নেতারা শুধু প্রতিশ্রুতি দিতে জানে। ভোটের সময় ঢালাও প্রতিশ্রুতি আর ভোট মিটলেই খুঁজে পাওয়া যায় না নেতাদের। ধীরে ধীরে মানুষ সবটাই বুঝতে পারছে। বিজেপি মানুষের পাশে নেই। বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।