• অভিমানী প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক জোড়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা
    বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: অভিমানী প্রেমিকা! যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছিলেন প্রেমিক। সম্পর্ক জোড়া লাগানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সেই সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কথা বলে প্রতারণা করা হল তিন লক্ষ টাকা! সেই টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে ১২জন নার্সিং ছাত্রীর বিরুদ্ধে। প্রেমিকের শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে ফোন পে-র মাধ্যমে ওই টাকা হাতানো হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের একজন আবার ওই যুবকের প্রেমিকা হিসেবে প্রক্সিও দিয়েছেন। মন্দারমণি কোস্টাল থানার সিলামপুর গ্রামের ওই যুবকের কথা প্রথমে পুলিস বিশ্বাসই করেনি। শেষমেশ আইনজীবীর দ্বারস্থ হয়ে কাঁথি এসিজেএম কোর্টে মামলা করেন। বিচারকের নির্দেশে ২৬অক্টোবর মন্দারমণি কোস্টাল থানার পুলিস ১২যুবতী সহ মোট ১৫জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে তদন্তে নেমেছে। 

    সিলামপুর গ্রামের বলাই মাইতি(নাম পরিবর্তিত) মন্দারমণিতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার চালান। প্রায় ছ’বছর আগে নদীয়ার কৃষ্ণনগরের এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। তাঁরা পরস্পরকে বিয়ে করবেন বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই যুবতী কলকাতার একটি নার্সিং কলেজে পাঠরতা ছিলেন। দু’বছর আগে আচমকা ওই যুবতীর মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। কোনও অবস্থায় প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বাড়িতে চিঠি পাঠান ওই যুবক। কিন্তু, রিপ্লাই আসেনি। এরপর প্রেমিকার খোঁজে সোজা কৃষ্ণনগর রওনা দেন। পোস্টঅফিসে গিয়ে ঠিকানা মিলিয়ে প্রেমিকার বাড়ি খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু, সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। মন্দারমণিতে কর্মসূত্রে থাকা বাগনান থানার নারকেলডাঙার তানবীর আফজল খান প্রায়ই ওই কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারে যেত। তানবীরের সঙ্গে ওই যুবকের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছিল। প্রেমিকাকে খুঁজে না পাওয়া নিয়ে তানবীরের কাছে দুঃখ করেছিলেন ওই যুবক। তানবীর জানিয়েছিল, তার এক বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড কলকাতায় নার্সিং পড়ে। তাই খোঁজ পেতে অসুবিধা হবে না। এই বলে তানবীর অভিযোগকারী প্রেমিকার নাম, ঠিকানা, ফটো নেয়। কয়েকদিন পর তানবীর ওই যুবককে জানায়, তাঁর প্রেমিকাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু, তিনি সম্পর্ক রাখতে চাইছেন না। তাঁকে বোঝানোর জন্য বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিছু টাকা পাঠাতে হবে। অভিযোগকারীর দাবি, এভাবে ১৫হাজার টাকা নেয়।

    কিছুদিন পর অভিযোগকারীর প্রেমিকা পরিচয় দিয়ে এক যুবতী তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট শুরু করে। বাড়ির লোকজন কথা বলতে নিষেধ করেছে বলে দাবি করে ওই চ্যাট চলতে থাকে। তারসঙ্গে আরও ১১জন যুবতী দু’জনের মধ্যে মিলন ঘটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গল্পগুজব করত। এভাবে প্রত্যেকে ওই যুবকের কাছ থেকে দফায় দফায় ২লক্ষ ৯৯হাজার ৯৪০টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ। তাল কাটে ১৫দিন আগে আসল প্রেমিকা ফোন করায়। পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে যোগাযোগ ছিন্ন করতে বাধ্য হন বলে জানান। তাঁকে খুঁজে পেতে প্রেমিক যা করেছেন সেই সব শুনে আসল প্রেমিকা হতবাক। তাঁর সঙ্গে এরকম কারও যোগাযোগ হয়নি বলেও জানান। এরপরই প্রতারণা বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ওই যুবক আইনের দ্বারস্থ হন। অভিযুক্তদের শাস্তি হবে কি না সেটা সময় বলবে। তবে, প্রেমিকাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা যে যুবতীর মন জয় করে নিয়েছে, তা হলফ করেই বলা যায়।
  • Link to this news (বর্তমান)