• দত্তপুকুর বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩, আজ ঘটনাস্থলে তদন্তে ফরেন্সিক টিম
    বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: দত্তপুকুর কদম্বগাছিতে তেল কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন। পাশাপাশি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন কারখানার মালিকের জামাই কুলদীপ সিং। ঘটনায় এক মৃতের পরিবারের তরফে দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায় গাফিলতি রয়েছে বলে দমকল বিভাগের পক্ষ থেকেও পৃথক একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই আবহে আজ, শুক্রবার ঘটনার তদন্তে আসছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। গোটা ঘটনায় এখনও আতঙ্কের ছায়া গোটা এলাকায়।

    বুধবার, দীপাবলির আলোর উৎসবের তোড়জোড় চলছিল। তখনই দত্তপুকুর থানার চণ্ডীগড়ি গ্রামে তেল কারখানায় বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড হয়। কারখানায় দাহ্য সামগ্রী থাকায় আগুন বিধ্বংসী আকার নেয়। বিস্ফোরণে শের আলি মোল্লা (৬৫), জয়দেব কর্মকার (৬০) ও বনগাঁর পল্লিশ্রীর বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সিকদার (৪৩) মারাত্মক জখম হন। বারাসত হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিশ্বজিৎকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বুধবার রাত ১২টায় বারাসত হাসপাতালেই মৃত্যু হয় জয়দেব কর্মকারের। ভোর পাঁচটার সময় মৃত্যু হয় শের আলি মোল্লার (৬৫)। তাঁদের বাড়ি মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়ায়। কালীপুজোর মধ্যে এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। বিস্ফোরণের ঘটনায় কুলদীপ সিং গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

    বারাসত পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার স্পর্শ নিলাঙ্গী বলেন, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দু’টি অভিযোগ হয়েছে। পরিবারের পাশাপাশি দমকল বিভাগ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায় গাফিলতি নিয়ে অভিযোগ করেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের তিনজনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে, কী কারণে এই ঘটনা, তা স্পষ্ট নয়। শুক্রবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা আসবেন অকুস্থলে। রিপোর্ট হাতে পেলেই সব কিছু বলা যাবে।

    জানা গিয়েছে, ওই কারখানার একেবারে শুরু থেকেই কাজ করতেন মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়ার শের আলি মোল্লা। গত ৩৫ বছর ধরে কাজ করায় মালিকের বিশ্বস্ত ছিলেন তিনি। বয়সের কারণে টাকা পয়সা বুঝিয়ে দিয়ে কাজ থেকে অবসর নেওয়ার কথাও তিনি বেশ কয়েকবার বলেছিলেন মালিক পক্ষকে। কিন্তু দীর্ঘদিনের কর্মীকে ছাড়তে নারাজ ছিলেন মালিকপক্ষ। কালীপুজো উপলক্ষ্যে কারখানার কয়েকজন হিন্দু শ্রমিকের ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। তাই কাজের চাপ বেশি থাকায় বুধবার সকাল ৮টার সময় বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। সন্ধ্যার মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরল নিথর দেহ। ছেলে আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘বাবা একাধিকবার অবসর চেয়েছিলেন। কিন্তু মালিক পক্ষ বাবাকে ছাড়তে চাননি। আর অবসর নেওয়ার আগেই কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হল। তদন্তের আবেদন জানিয়ে থানায় অভিযোগ করেছি’। 

    শুক্রবার এলাকা ছিল কার্যত থমথমে। কারখানা সিল করে রেখেছে পুলিস। বিস্ফোরণের বীভৎসতায় এখনও আতঙ্কিত মানুষ। কারখানার একাধিক জায়গায় ফাটল তৈরি হয়েছে। পাশের একটি বাঁশবাগানও ক্ষতিগ্রস্ত।
  • Link to this news (বর্তমান)