নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জোড়াবাগান এলাকায় পাঁচতলার চিলেকোঠার ঘরে মাঝবয়সি ব্যক্তিকে খুন করে সোনার গয়না সহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৫) নামে ওই ব্যক্তির দেহ ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিস। তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে। লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে গোটা ঘর। লুটের সময় বাধা দেওয়াতেই তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিসের প্রাথমিক অনুমান। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জোড়াবাগান থানা এলাকার সেন লেনের এই বাড়িতে অভিজিৎবাবু দীর্ঘদিনের ভাড়াটে। তাঁর সঙ্গেই থাকেন দিদি ও ভাগ্নে। চিলেকোঠার ঘরে একাই থাকতেন তিনি তাঁর দিদি নীচের তলায় থাকেন। এলআইসির এজেন্টের পাশাপাশি গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা রয়েছে মৃত ব্যক্তির। কিছুদিন আগে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে মোটা টাকা পেয়েছিলেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। সেই সময় তিনি সকলের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পুলিস জেনেছে, অভিজিৎবাবুর কাছ থেকে গাড়িটি বৃহস্পতিবারের জন্য ভাড়া নেন পাপাই নামে এক যুবক। গাড়ির চাবি নেওয়ার জন্য তিনি অভিজিৎবাবুকে সকাল আটটা নাগাদ মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু ফোন বেজে যায়। এরপর তিনি একজনকে নিয়ে উপরে উঠে দেখেন তাঁর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়াশব্দ আসেনি। নীচে নেমে এসে তিনি সে কথা তাঁর দিদিকে জানান। দিদি ওই বাড়ির এক বাসিন্দা প্রমোদ গুপ্তা নামে একজনকে উপরে পাঠান। ঘর ভিতর থেকে বন্ধ দেখে তিনি পিছনের পাঁচিল টপকে ছাদে পৌঁছন। চিলেকোঠার ঘরের দরজা ভেজানো থাকায় ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে যায়। তিনি ভিতরে গিয়ে দেখেন খাটে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন অভিজিৎবাবু। অর্ধেক শরীর খাটে, বাকিটা বেরিয়ে আছে বাইরে। গোটা বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তাঁর মাথায় ও বুকে ভারী কিছু নিয়ে আঘাত করা রয়েছে। তাঁর দিদির সঙ্গে কথা বলে পুলিস জেনেছে, ভাইয়ের গলায় সোনার চেন ও হাতের সোনার আংটি ছিল। সেগুলি শরীরে নেই। সারা ঘরে তন্নতন্ন করে কিছু খোঁজা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আসেন ডিসি নর্থ দীপক সরকার সহ পুলিস কর্তারা। আসে পুলিস কুকুরও।
তদন্তে উঠে আসছে, বাড়ির দরজা খোলা থাকায় দুষ্কৃতীরা সিঁড়ি দিয়ে সোজা উপরে উঠে যায়। বাড়ির পাঁচতলার অংশে ছোট পার্টিশন রয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, সেটি টপকে দুষ্কৃতী দলটি অভিজিৎবাবুর ঘরে পৌঁছয়। সেখানে জিনিসপত্র ওলোটপালোট করার শব্দে ঘুমে ভেঙে যায় তাঁর। এই সময় তাঁর কাছ থেকে সোনার চেন ও আংটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু তিনি বাধা দেওয়ায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁর শরীরে ১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে মাথায় আঘাত রয়েছে নয়টি। অপরাধের ধরন দেখে পুলিসের সন্দেহ, পেশাদার কোনও বার্গলারের দল এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। তারা এই এলাকায় আগেও এসেছে। যে কারণে সহজেই উপরে উঠে যেতে পেরেছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজ পেতে পাশের বাড়ি থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।