‘প্যালেস্তাইনেও তো বোমা ফাটছে, সেখানে দূষণ হচ্ছে না?’ পুলিসকে পাল্টা প্রশ্ন শব্দবাজি ফাটানোয় অভিযুক্তর
বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কালীপুজোর আগের দিন থেকেই আকাশ-বাতাস ঝালাপালা করে বাজি ফাটাচ্ছিলেন বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার এক ব্যক্তি। থানায় খবর যায়। পুলিস তাঁকে ধরে নিয়ে আসে। জানা গিয়েছে, পুলিস আধিকারিক ও ওই ভদ্রলোকের কথাবার্তা শুনে থ বনে গিয়েছেন সবাই। আধিকারিক তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি জানেন না, শব্দবাজি নিষিদ্ধ? এত বাজি ফাটাচ্ছিলেন কেন?’ উত্তরে আধিকারিককে শুনতে হয়, ‘দূষণের কথা বলছেন? দূষণের কথা? প্যালেস্তাইনে তো ইজরায়েল বোম ফাটাচ্ছে। সেখানে দূষণ হচ্ছে না?’ চোখ গোল গোল হয়ে গিয়েছিল সবার। উত্তরে ওই আধিকারিক বলেন, ‘আমি প্যালেস্তাইনের দায়িত্বে নেই। এখানকার দায়িত্বে আছি। তাই আপনাকে বলছি।’ অন্যান্য পুলিস আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘এই যদি সচেতনতার হাল হয়, শব্দবাজি আটকানো যাবে কীভাবে?’ একবার লোকসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়িকে ঠাট্টা করে সাংসদ লালুপ্রসাদ যাদব বলেছিলেন, ‘ছোট বাচ্চারা ফাটায় ঠিক আছে। তা বলে আপনি বোম ফাটাবেন?’ মস্করায় হেসে ফেলেছিলেন বাজপেয়ি নিজেও। তবে তা ছিল নিছকই ঠাট্টা। বাজিপ্রেমী ভদ্রলোক মোটেও মস্করা করে বোম ফাটানোর কথা বলেননি।
সল্টলেকে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দপ্তরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখানে বড় পর্দায় পর্ষদের আধিকারিকরা সারা রাজ্যের বাতাসের মান, শব্দদূষণের মাত্রার উপর নজর রাখছেন। কন্ট্রোলে সারা বাংলা থেকে অভিযোগের খবর আসছে। কেউ ফোন করছেন শব্দবাজির অভিযোগ জানিয়ে। কেউ সাউন্ড বক্সের শব্দে নাজেহাল। আবার এরকম ফোনও আসছে, পাশের বাড়ির এসির আওয়াজে রাতে ঘুম হচ্ছে না স্যার। এসব ফোন অবাক করছে পরিবেশ ভবনের আধিকারিকদের। কিন্তু অভিযোগ এলেই পর্ষদ সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় জানাচ্ছে। চলছে ড্রোনে নজরদারি।
সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী, কালীপুজোর দিন রাত আটটা থেকে ১২টা পর্যন্ত শুধুমাত্র সবুজবাজি ফাটানো যাবে। কিন্তু কে কার কথা শোনে! বাজি পোড়ানো চলছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দবাজি নিয়ে প্রশাসনের কড়াকড়ির পর আলোবাজির ব্যবহার বেড়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘বাজির প্রতিটি রঙের জন্য আলাদা রকমের রাসায়নিক ব্যবহার হয়। সেই রাসায়নিক জনস্বাস্থ্যর উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।’
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘কোনও ধরনের বাজি না ফাটানোই তো ভালো। সর্বোচ্চ আদালত দু’ঘণ্টা সবুজ বাজি ফাটানোর অনুমতি দিয়েছে। সেই নিয়ম মেনে চলতে আবেদন জানিয়েছি। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের নিয়ে আতসবাজি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি সেমিনার করেছিলাম। আমরা সচেতনতা বৃদ্ধির দিকেই নজর দিকে চাই।’