শ্যামনগরের মূলাজোড়ের ব্রহ্মময়ী মাকে ভোগ দেওয়া হয় পাঁচ রকমের মাছ দিয়ে
বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: গঙ্গায় ডুবে নয় বছরের মেয়ে ব্রহ্মময়ীর মৃত্যুর পর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন রাজা গোপীমোহন ঠাকুর। সেই স্বপ্নাদেশ অনুসারেই শ্যামনগরের মূলাজোড় ব্রহ্মময়ী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। বুধবার সেই ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বলছিলেন ওই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত নিমাই চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, গঙ্গার তীরে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার একটি ইতিহাস রয়েছে। তৎকালীন রাজা গোপীমোহন ঠাকুরের নয় বছরের কন্যা ব্রহ্মময়ীকে বিবাহের জন্য পাথুরিয়াঘাটার গঙ্গা স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডুব দিয়ে আর ওঠেনি ওই কন্যা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য ওই রাজা তখন খুব মনোকষ্টে রয়েছেন। তখনই তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে শ্যামনগরের গঙ্গার ধারে মুলাজোড়ে জঙ্গলের মধ্যে অবহেলায় পড়ে আছে মায়ের মূর্তি। সেই মূর্তিকে খুঁজে মন্দির বানিয়ে প্রতিষ্ঠা করার আদেশ স্বপ্নে পান তিনি। সেই অনুসারেই এখানে মন্দির তৈরি করেন।
প্রধান পুরোহিত আরও বলেন, পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি যে, গঙ্গা দিয়ে রামপ্রসাদ সেন শ্যামাসঙ্গীত গাইতে গাইতে যাচ্ছিলেন। তখন মা তাঁকে বলেন, একটু দাঁড়িয়ে আমাকে গান শুনিয়ে যা। সাধক রামপ্রসাদকে দেখতে ও তাঁর গান শুনতে মা দক্ষিণ থেকে পশ্চিম মুখী হয়ে যান। আজও পশ্চিমমুখী শ্যামনগরের মুলাজোড়ের ব্রহ্মময়ী মা। আজ বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা সাতটায় পুজো শুরু হবে। ভাত, ডাল, পাঁচ রকমের ভাজা, পাঁচ রকমের সব্জি, পাঁচ রকমের মাছ, চাটনি, মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়া হয়।
শ্যামনগরের এই কালীবাড়িতে পৌষ মাসে ভক্তদের বিরাট ঢল দেখা যায়। এই মন্দিরের গায়ে এক সময় টোল ছিল। যেখানে ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের দাদাও পড়াশোনা করেছেন। টোল আজ নেই, কিন্তু এই মন্দিরকে ঘিরে ইতিহাস আজও শ্যামনগরের মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। কালীপুজোর সময় কলকাতা থেকেও অনেকে গিয়ে পুজো দেন। রাতভর প্রসাদ বিতরণ হয়। এছাড়া শ্যামনগর স্টেশনের কিছুটা দূরেই রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। সেখানেও নিষ্ঠার সঙ্গে পূজোর আয়োজন করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র