বাঘের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন গ্রামবাসীকে, বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে দেবতাজ্ঞানে পুজো পায় উর্দিধারী
বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: তখন শ্বাপদ সঙ্কুল জনপদ। পাশেই বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল। রাত হলেই আতঙ্ক গ্রাস করত গ্রামবাসীদের। এই বুঝি বাঘের হানা হল! সে সময়ে বন্দুক হাতে রাত পাহারা দিয়ে বন্যপ্রাণীর আক্রমণের হাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করেছিলেন দুই রক্ষী। আসলে তাঁরা ছিলেন দেবী চৌধুরানির সহচর। বৈকুণ্ঠপুরের মানুষ যেমন আজও ভোলেননি দেবী চৌধুরানিকে, তেমনই মনে রেখেছেন তাঁর সেই সহচরদের। আর তাই জলপাইগুড়ির শিমলাডাঙ্গি কিংবা দিল্লিভিটা চাঁদের খালের বাসিন্দারা মন্দিরে দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের পাশাপাশি ওই উর্দিধারী রক্ষীদের মূর্তি গড়েও পুজো করেন। মন্দিরে যে বন্দুক হাতে রক্ষীর মূর্তি পূজিত হয়, তা শুধু উত্তরবঙ্গে নয়, গোটা রাজ্যে এমনকী দেশেও বিরল।
জলপাইগুড়ির বেলাকোবার শিমলাডাঙ্গি মন্দিরে দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের মাটির মূর্তি রয়েছে। সারা বছর পূজিত হন তাঁরা। বাৎসরিক পুজো হয় নভেম্বরে। তাঁদের সঙ্গেই পুজো পান খাকি উর্দিধারী এক রক্ষী। পুলিসের পোশাকে ওই রক্ষীর এক হাতে বন্দুক, অন্য হাত বরাভয়। পাশেই মা কালী। গতকাল, বৃহস্পতিবার রাতে ঘটা করে পুজো হয়েছে কালীমায়ের। বলির পাঁঠার মাংস ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়েছে দেবীকে। সঙ্গে পুজো পেয়েছে বাকি মূর্তিগুলিও। মন্দিরে একটি বাঘের মূর্তিও রয়েছে। দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয় তাকেও। বাসিন্দাদের দাবি, বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গলে যে একসময় বাঘ ছিল, মূর্তি গড়ে পুজো করা তারই প্রমাণ।
মন্দির কমিটির সম্পাদক জ্যোতিষ রায় বলেন, “দেবী চৌধুরানি আমাদের চোখে দুর্গারই একটি রূপ। ডাকাতি করে আনা ধনসম্পদ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন তিনি। আর তাঁর রক্ষীরা বাঘের হাত থেকে রক্ষা করতেন গ্রামবাসীদের। একইসঙ্গে আগলে রাখতেন দেবীরূপী ডাকাতরানিকে। সেই কারণেই আমরা একই আসনে দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের সঙ্গে তাঁর সিপাহীরও পুজো করি।”
জলপাইগুড়ির আঞ্চলিক গবেষক উমেশ শর্মা বলেন, “দেবী চৌধুরানির দু’জন বন্দুকধারী বিশ্বস্ত সহচর ছিল। রঙ্গলাল ও রঙ্গরাজ। তারা যেমন দেবী চৌধুরানিকে রক্ষা করত, তেমনই হিংস্র বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করত গ্রামবাসীদের। এই কারণে আজও দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের মূর্তির পাশে উর্দিধারী রক্ষীদেরও দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয়।