প্রতি বছরের মতো এবারও কালীঘাটের বাসভবনে সমস্ত রীতি, রেওয়াজ মেনে কালীপুজোর আয়োজন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আয়োজনে নজর কেড়েছে মায়ের মণ্ডপ ও বাড়ির উঠোনের সাজ-সজ্জা। কারণ, কালীপুজো উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর ভিতরের অংশের সংশ্লিষ্ট চত্বর সাজানো হয়েছিল 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' দিয়ে।
বস্তুত, এদিনের আয়োজনের ছত্রে ছত্রে ছিল বাঙালিয়ানা। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উঠোনে যেন উঠে এসেছিল এক টুকরো গ্রাম বাংলার চালচিত্র। মায়ের মণ্ডপ সাজানো হয়েছিল ধানের ছড়া দিয়ে। উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুজোর সময়েও ধানের ছরা ব্যবহারের রীতি রয়েছে বাঙালিদের মধ্যে।
পুজোস্থল ও আশপাশের আলপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেইসঙ্গে ছিল ধনদেবী মা লক্ষ্মীর বাহন প্য়াঁচার মুখ আঁকা মাটির তৈরি পয়সায় পূর্ণ লক্ষ্মীর ঘট বা ভাণ্ডার।
বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের 'মহিমা' অধিকাংশেরই অজানা নয়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে দাপিয়ে প্রচার সারে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি।
সেই সময় অনেক তাবড় রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেছিলেন, ওই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে টেক্কা দেবে বিজেপি। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে এমন এক মাস্টার স্ট্রোক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতেই বিরোধীদের সমস্ত হিসেবনিকেশ ঘেঁটে যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মহিলাদের জন্য চালু করেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। যে প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার।
যদিও পরবর্তীতে একাধিকবার এই প্রকল্পে আরও রদবদল ঘটিয়ে তার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে মাসিক আর্থিক সহায়তার পরিমাণও।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কেবলমাত্র যে তৃতীয়বারের জন্য সরকারের ফেরে, তাই নয়। ফেরে নয়া নজির তৈরি করে। তাদের আসন সংখ্যা ২০০-এর গণ্ডী ছাপিয়ে যায়!
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, এক লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করেই রাজ্যের বেশিরভাগ মহিলা ভোট নিজের পক্ষে করে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
সবথেকে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, বিরোধীরা নানা সময় এই প্রকল্পের সমালোচনা করলেও, তাদের দল দ্বারা শাসিত ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুকরণে নানা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ - লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্রমেই বাংলার রাজনীতি ছাপিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে 'মহিমা' বিস্তার করতে শুরু করেছে।
এহেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সহযোগে আরাধ্যা দেবীর পুজোমণ্ডপ ও পুজোস্থল সাজিয়ে আবারও একবার সকলের নজর কাড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজর কাড়ল পুজো ঘিরে রাজ্যের আমলা-আধিকারিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিও।