ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০ঃ৫০ টা। মেট্রো স্টেশনে ইতস্ততভাব ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক বৃদ্ধ। কখনও প্লাটফর্মের এদিক আবার কখনও ওদিকে ট্রেনের প্রতীক্ষায় বারবার দেখছেন। কিন্তু, ট্রেনের জন্য বৃদ্ধের প্রতীক্ষা আর পাঁচটা সাধারণ যাত্রীর মতো ছিল না। সিসিটিভিতে বৃদ্ধকে এভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখেই সন্দেহ হয়েছিল মেট্রো কর্মীদের। আর তারপরে সেখানে গিয়ে বৃদ্ধকে আটকে ফেললেন মেট্রো কর্মীরা। আসলে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলেন ওই বৃদ্ধ। মেট্রো কর্মীদের তৎপরতায় তাঁকে আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এরকমই ঘটনা ঘটেছে কালীপুজোর দিন কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে।
জানা গিয়েছে, বৃদ্ধের বয়স ৭৫ বছর। তিনি কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে ডাউন লাইনে ট্রেন ঢোকার ঠিক আগার মুহূর্তে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তড়িঘড়ি মেট্রো কর্মী এবং আরপিএফ সেখানে পৌঁছে তাকে ধরে ফেলে। পরে বৃদ্ধ স্বীকার করেন যে তিনি আত্মহত্যা করার জন্যই মেট্রো স্টেশনে এসেছিলেন। তবে কর্মীদের তৎপরতাই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে ওই বৃদ্ধের। এরপর খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পরে পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে। যদিও কী কারণে বৃদ্ধ এমন পদক্ষেপ করতে চাইছিলেন তা জানা যায়নি।
মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, সব সময় সিসিটিভির মাধ্যমে যাত্রীদের গতিবিধির ওপর স্টেশনের মধ্যে নজর রাখা হয়। নজরদারির সময় ওই বৃদ্ধকে সিসিটিভিতে দেখা যায়। তাঁকে দেখে সন্দেহ হতেই দেরি না করে মেট্রোর কর্মী ও আরপিএফের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। মেট্রোয় ঝাঁপ মারার আগেই তাঁকে ধরে ফেলতে সক্ষম হন মেট্রোর কর্মী ও আরপিএফ। বৃদ্ধকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় একটি নিরাপদ জায়গায়। সেখানেই স্বীকার করেন তিনি আত্মহত্যা করতে চাইছিলেন।
মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, ট্রাফিক সুপারভাইজার দেবব্রত সেন শর্মা, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শ্রী টি. ভূনিয়া, পয়েন্টস ম্যান বি শিও ক্র. রায়, কমার্শিয়াল পোর্টার শ্রী বরুন দাস, কমার্শিয়াল পোর্টার শ্রী সাম্বু দাস এবং কমার্শিয়াল পোর্টার শ্রী বিপ্লব মণ্ডলের তপরতায় বৃদ্ধকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
পরে পুরো ঘটনা সম্পর্কে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট কালিঘাট থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ আধিকারিকরা কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে পৌঁছন। এরপর নিয়ম মেনে বৃদ্ধকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। তবে এদিনের ঘটনায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়নি।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর মেয়ের সামনেই মেট্রোই ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এক মহিলা। স্কুল ছুটির পর তিনি মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে ঢোকেন। এরপর দক্ষিণেশ্বরগামী একটি ট্রেন স্টেশনে ঢোকার ঠিক আগেই তিনি লাইনে ঝাঁপ দেন। ঘটনায় সঙ্গেসঙ্গে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি থার্ড লাইন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করেন মেট্রোকর্মীরা।