নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: এবার দীপাবলিতে বীরভূমে শব্দদানবের অত্যাচার একেবারেই কম। পুলিসি কড়াকড়িতে কালীপুজোয় সারারাত ধরে বাজি ফাটানোর তেমন কোনও অভিযোগ উঠল না। পুলিসের দাবি, যেটুকু বাজি ফেটেছে তা কেবল গ্রিনবাজিই। পুজোর আগে দোকানে দোকানে লাগাতার অভিযান চালানোর ফলেই এই সাফল্য বলে দাবি পুলিসের। সব মিলিয়ে কালীপুজোর রাতে ‘শব্দ জব্দ’ করে হিরোর ভূমিকায় বীরভূম জেলা পুলিস। জেলা পুলিসের এক অফিসার বলেন, কোথাও শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ তেমন নেই। তারস্বরে মাইকও বাজেনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাজি ফাটানো ও মাইক বাজানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি থানাই ভালো কাজ করেছে। পুজোর আগে পুরন্দরপুর থেকে প্রচুর নিষিদ্ধ শব্দবাজি উদ্ধার হয়েছিল। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এরকম সবজায়গাতেই অভিযান চালানো হয়েছে বলে বাজারে শব্দবাজি মেলেনি।
এদিকে রাজ্যের বিভিন্ন শহরে সারারাত ধরে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ সামনে আসছে। গতবার বীরভূমেও সিউড়ি, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট শহরে ব্যাপক বাজি ফেটেছিল। এবার তা হয়নি। দীপাবলিতে কেবলমাত্র আলোর উৎসবেই মেতেছিলেন জেলাবাসী। বাজির বাজারে প্রাধান্য ছিল আতশবাজির। এতে লাভবান হয়েছেন ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা। এই প্রসঙ্গে সারা বাংলা আতশবাজি উন্নয়ন সমিতির রাজ্য সভাপতি বাবলা রায় বলেন, বীরভূমে ১৭০০ জন ব্যবসায়ীকে অস্থায়ীভাবে বাজি বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ৫০ জনের মতো পাকাপাকি লাইসেন্স হোল্ডার তো ছিলেনই। খুবই ভালো ব্যবসা করেছেন বাজি বিক্রেতারা। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১২৫ ডেসিবেলের বেশি আওয়াজের বাজি কোথাও তেমন ফাটেনি বলেই জানি। যদি রাজ্যের নিরিখে দেখি, তবে এবার গত ৬০ বছরের মধ্যে বাজি ব্যবসায় রেকর্ড হয়েছে। গতবছর রাজ্যে ৮ হাজার কোটি টাকার বাজি বিক্রি হয়েছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। ছোট ব্যবসায়ীরাও লাভের মুখ দেখেছেন। খুব শীঘ্রই বীরভূমে একটি আতশবাজির বড় কারখানা তৈরি হতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি পুজোর রাতে বড়সড় দুর্ঘটনার খবরও তেমন নেই। প্রতিবছর সিউড়ি-আহমদপুর রাস্তায় রাতের দিকে বাইক দুর্ঘটনা লেগেই থাকত। অনেকেই রাতে বাইকে চেপে এই রাস্তায় থাকা প্রাচীন কালীপুজোগুলি দেখতে বের হন। তখনই দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় অনেকের। এবার কিন্তু একটিও তেমন ঘটনা নেই। পুলিসের বেশ কয়েকটি মোবাইল ভ্যানকে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায়। যারা দ্রুতগতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন তাদের কাউকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বেশ কিছু গাড়িকে জরিমানাও করা হয়েছে বলে জানা যায়। সিউড়ি থানাতে ওই রাতে ৩ থেকে ৪ জনকে এইসব কারণেই আটক করা হয়েছিল। পুলিসের দাবি, দীপাবলি উৎসব একেবারে সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। তবে এখন সবথেকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে বিসর্জনে ডিজে ব্যবহারের উপর। ইতিমধ্যেই পুজো উদ্যোক্তা ও সাউন্ড সিস্টেম মালিকদের পুলিস জানিয়ে দিয়েছে, বিসর্জনে ডিজে বাজলেই তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।