• অবৈধ বাজির জের, কালীপুজোর রাতে বহরমপুরে বায়ুদূষণ পৌঁছল চরমসীমায়
    বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: গ্রিন বাজিতেও রক্ষা নেই। বায়ুদূষণের জেরে বাতাসের গুণগত মান চরম সীমায় পৌঁছে গেল। মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরে কালীপুজোর রাতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স সর্বোচ্চ ৩০০ সূচকে পৌঁছয়। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলে দাবি পরিবেশবিদদের। নির্দিষ্ট ওই সময়ে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের বিচারে বিশ্বের মধ্যে দূষিত শহর হিসেবে ১১৩তম স্থানে ছিল বহরমপুর। আদালতের নির্দেশে রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও, সাধারণ মানুষ মানল না সেই নিয়ম। দশটার পরেও দেদার আতশবাজি পোড়ানো হল। পরিসংখ্যান বলছে, বৃহস্পতিবার রাত আটটার সময়ে বহরমপুরের ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ ছিল ৮২। মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে চারগুণ বেড়ে যায় এই সূচক। রাত একটার সময়ে ৩০০ ছড়িয়ে যায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই দাবি পরিবেশবিদদের। 

    গ্রিন বাজির মোড়কে জেলার সর্বত্র অবৈধ বাজি বিক্রি হল। গভীর রাত পর্যন্ত সেই বাজি পোড়ানোর জেরে বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়াল। সেই সঙ্গে বহরমপুর, কান্দি, মুর্শিদাবাদ, জিয়াগঞ্জ, ডোমকল সর্বত্রই দেদার ফাটল শব্দবাজি। জেলাজুড়ে প্রচুর অবৈধ বাজি মজুত ও বিক্রি করা হলেও সেভাবে পুলিসি অভিযান নজরে আসেনি। যার ফলে এই দূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে বলেই অভিযোগ পরিবেশবিদদের। অবৈধ বাজি মজুত করার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে বহরমপুর থানার পুলিস। 

    পরিবেশবিদদের দাবি, অন্যান্যবার যেভাবে পুলিস ও প্রশাসন অবৈধ বাজির বিরুদ্ধে অভিযানে নামে এবার সেই তৎপরতা দেখা যায়নি। যে কারণে সবুজ রঙের প্যাকেটের আড়ালে অনেকেই দূষণ সৃষ্টিকারী বাজি বিক্রি করেছে। এর জেরে বাতাসের গুণগত মান হঠাৎ করেই এতটা খারাপ হয়। পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ বলেন, কালীপুজোর রাতে বহরমপুরের বাতাস অত্যন্ত দূষিত হয়ে যায়। রাত আটটার সময়ে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৮২। রাত একটায় তা ৩০০ ছড়িয়ে যায়। আদালত বাজি পোড়ানোর জন্য রাত আটটা থেকে দশটা যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, তা একেবারেই মানা হয়নি। সে কারণেই গভীর রাতে দূষণ এই মাত্রা ছাড়িয়েছে। এই সময়ে খোলা বাতাসে শ্বাস নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এটা মানুষের দ্বারা তৈরি দূষণ। একপ্রকার অপরাধ করা হয়েছে পরিবেশের সঙ্গে। তবে ধীরে ধীরে বাতাস পরিশ্রুত হতে থাকে। শুক্রবার দুপুরে বহরমপুরে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ১১০ নজরে এসেছে। 

    চিকিৎসকরাও বায়ুর দূষণের মান দেখে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তাঁরা বলেন, বায়ু এইভাবে দূষিত হওয়ার ফলে শ্বাসনালির সংক্রমণ, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের ব্যাধি, স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ক্যান্সার সহ দূষণজনিত বেশ কয়েকটি রোগ হতে পারে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ১২০-এর উপরে উঠে গেলেই মাস্ক ব্যবহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। একিউআই ২০০ ছাড়ালে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বেরনোই ভালো। তবে বাজি পোড়ানোর ফলে এই দূষণ মাত্রা ছড়িয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)