নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: কালীপুজোর পুলিসের লড়াই ছিল মূলত দ্বিমুখী। একদিকে, শব্দবাজি ঠেকানো আর অন্যদিকে আরেক শব্দদানব ডিজের দাপট আটকানো। তাতে কী ফলাফল করল পুলিস? দেখা গিয়েছে, জোড়া পরীক্ষার একদিকে চ্যাম্পিয়ন হয়েও অন্যদিকে ডাহা ফেল তারা। অর্থাৎ শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে এলেও ডিজে ঠেকানো গেল না এবারেও।
কালীপুজো মূলত রানাঘাট, আড়ংঘাটা, কুপার্স ক্যাম্প, বগুলা, শান্তিপুরের মতো একাধিক এলাকার অন্যতম প্রধান উৎসব। ফলে ব্যাপক হারে কালীপুজো হয় এলাকাগুলিতে। পুজো নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রানাঘাট পুলিস জেলার অন্যতম চ্যালেঞ্জ থাকে শব্দদানবের তাণ্ডব ঠেকানো। কারণ শব্দবাজির আঁতুড়ঘর গাংনাপুর রয়েছে এক্কেবারে রানাঘাটের উপকন্ঠে। একসময় কালীপুজো মানেই নিয়মিত শব্দবাজির আমদানি হতো ওই অঞ্চল থেকে। প্রতিবছর শব্দবাজি ঠেকাতে ব্যর্থ পুলিসকে পড়তে হতো প্রশ্নের মুখে। চলতি বছরও রানাঘাট বা তার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে শব্দবাজি কতটা আটকানো যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল ডিজে শব্দবাজি বিরোধী নাগরিক মঞ্চগুলির। কিন্তু কালীপুজোর রাতে রানাঘাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে শব্দবাজি এবার অধিকাংশ জায়গাতেই প্রায় নগণ্য পর্যায়ে ছিল। যেমন, গত বছর শব্দবাজি নিয়ে যথেষ্ট খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল রানাঘাট শহরের মানুষের। কিন্তু চলতি বছর লাগোয়া আনুলিয়া এলাকা ছাড়া সেভাবে শব্দবাজির উৎপাত ছিল না। ফলে বলাই বাহুল্য, যে ধাক্কা প্রতি বছর পুলিসকে খেতে হয় এবার প্রাক পুজো অভিযান চালিয়ে সেই শব্দবাজি অনেকটাই নির্মূল করতে পেরেছে রানাঘাট পুলিস জেলা। এই বিভাগে তারা চ্যাম্পিয়ন হলেও ডাহা ফেল দ্বিতীয় বিভাগে, অর্থাৎ ডিজে ঠেকাতে।
আড়ংঘাটা থেকে বগুলা, শান্তিপুর থেকে রানাঘাট এই বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা গ্রামাঞ্চলের অভিজ্ঞতা বলছে, ডিজের দাপট ছিল স্বমহিমায়। আড়ংঘাটা থেকে হিজুলি আসার রাস্তায় বৃহস্পতিবার বিকেলে মণ্ডপমুখী প্রায় সব প্রতিমার সঙ্গেই ছিল তারস্বরে ডিজে। শব্দদানবের এই দাপট ঠেকাতে পুলিসের কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। আবার আড়ংঘাটা এলাকা দিয়েই একাধিক মণ্ডপমুখী প্রতিমা ডিজে বাজিয়ে যাওয়ার সময় তার ‘সাক্ষী’ থেকেছেন পথে কর্তব্যরত পুলিসকর্মীরাই। অনতিদূরে আড়ংঘাটা ফাঁড়ি থাকলেও ডিজে বাজিয়ে ঠাকুর নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সেখানে তৎপরতা ছিল না। বলা ভালো, পুলিসের পুরো নজরই ছিল ভিড় নিয়ন্ত্রণে। রাতে শান্তিপুরের একাধিক এলাকায় ডিজে চালিয়ে তুমুল নৃত্য চলেছে। তাও আবার প্রকাশ্য পথের ধারেই। ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও লক্ষণ চোখে পড়েনি সেখানেও। এনিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে পুলিসের এক কর্তা বলেন, শব্দবাজি নিয়ে প্রতি বছর প্রচুর অভিযোগ থাকে। আমরা একাধিক অভিযান চালিয়ে প্রায় নির্মূল করতে পেরেছি সেই সমস্যা। ডিজেও বা সাউন্ড বক্স অনেক নিয়ন্ত্রণ ছিল শহর এলাকাগুলিতে। গ্রামাঞ্চলগুলিতেও খবর পেলেই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিস।