• কাশীর ‘যোগগুরু’ স্বামী শিবানন্দ শিলিগুড়িতে বার্তা দিচ্ছেন মানবসেবা ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের
    বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: বয়স ১২৯। তবু দৃষ্টিশক্তি যথেষ্ট চাঙ্গা। চশমা ছাড়াই গড়গড় করে পড়েন সংবাদপত্র, বই। চলাফেরাও স্বাভাবিক। অনায়াসে সিঁড়িভেঙে উঠে যান দোতলায়। তিনি কাশী নিবাসী ‘যোগগুরু’ বা ধর্মগুরু স্বামী শিবানন্দ। দু’বছর আগে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। গত একমাস ধরে তিনি শিলিগুড়িতে রয়েছেন। তাঁকে দেখতে ভিড় করছেন কৌতূহলী জনতা। তিনি সকলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের বার্তা দিচ্ছেন। 

    গত ৬ অক্টোবর ট্রেনে চেপে শিলিগুড়িতে আসেন যোগগুরু স্বামী শিবানন্দ। মাঝে কয়েক দিনের জন্য কোচবিহার ও মাথাভাঙায় যান। সেখান থেকে ফিরে শিলিগুড়ি শহরের অরবিন্দপল্লিতে এক ভক্তের বাড়িতে উঠেছেন। শুক্রবার তাঁকে দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় করেন কৌতূহলীরা। তাঁদের কেউ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী, কেউ বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক, আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ী। তাঁদের কাউকে গীতা, কাউকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের করা ট্যুইট বার্তা নিয়ে তৈরি কার্ড প্রদান করেন তিনি। চশমা ছাড়াই তাতে শুভেচ্ছার কথা লেখেন। এমনকী, তিনি খালি গায়ে চেয়ারে বসে তাঁদের সঙ্গে ছবিও তোলেন। 

    বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলেন। সুস্থ থাকার রহস্যের ব্যাপারে স্বামী শিবানন্দ বলেন, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে হবে। মানুষকে ভালো বাসতে হবে। মানব সেবাই আমার ধর্ম। তাই সুস্থ, সবল রয়েছি। কোনও রোগ নেই। 

    ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট সিলেটের গরিব পরিবারে স্বামী শিবানন্দের জন্ম। চারবছর বয়সে নবদ্বীপের সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দর কাছে তাঁকে দিয়ে দেন তাঁর বাবা-মা। সেখানেই পড়াশোনা শেখেন। ডাক্তারি পাশ করেন। স্বামী সদগুরু ওঙ্কারানন্দ গোস্বামীর কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি নিয়মিত যোগব্যাম চর্চা করেন। এক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০২২ সালের মার্চ মাসে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করা হয়েছে। 

    এদিন তাঁর ভক্ত কৃষি বিজ্ঞানী কৌশিক দাস বলেন, গুরুদাদুর (স্বামী শিবানন্দ) শ্রবণশক্তি সামান্য দুর্বল হলেও তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। ফল, দুধ খান না। প্রতিদিন দুপুরে দু’টি রুটি, সেদ্দ সব্জি, শাক বাটা খান।। রাতে খান একটি রুটি। তাঁর রান্নার তেল, নুন থাকে না। দুপুরে ঘুমান না। রাত ৮টা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আড়াইটে নাগাদ বিছানা ছাড়েন। গুরুনাম জপ করেন। যোগব্যায়াম করেন। গীতাপাঠ ও চণ্ডীপাঠ করেন। পুজো দেন। এখনও সিঁড়িভেঙে বাড়ির দোতলায় উঠছেন, নামছেন। এমনকী, গাড়িতে চেপে কলকাতা থেকে পুরী যান সড়ক পথে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। সকলের সঙ্গে গল্প করতে ভালোবাসেন। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত এখানে থাকবেন তিনি। ৮ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেভক রোডের একটি হলে ভক্তদের সেবায় নানা অনুষ্ঠান করবেন। তাঁর ভক্ত কৃষি বিজ্ঞানী কৌশিক বলেন, গুরুদাদুর মধ্যে রোগ, বাসনা, চিন্তা, দুঃখ, সমস্যা নেই। টাকা-পয়সা সহ কোনও প্রকার দান গ্রহণ করেন না। তিনদিনের অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন ও মানব সেবার বার্তা দেবেন।  স্বামী শিবানন্দ - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)