ডুমরাডাঙ্গিতে শতাব্দী প্রাচীন কালীপুজো হয় দিনের আলোয়, সন্ধ্যাতেই বিসর্জন
বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, করণদিঘি: উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘির ডুমরাডাঙ্গিতে কালীপুজো হয় দিনের আলোয়। জমিদার আমল থেকেই এই প্রথা মেনে অমাবস্যার রাত কেটে যাওয়ার পর দিনের আলোয় মায়ের পুজো হয়ে আসছে। এটি জুঝারপুরিয়ানি কালীপুজো নামে পরিচিত। কয়েকশো বছর আগে এই পুজো শুরু করেছিলেন বিহারের পূর্ণিয়ার রাজা পৃথ্বীচাঁদ সিংহ। তখনকার দিনে রাজ পুরোহিত কলা পাতায় পুজোর সামগ্ৰী সাজিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে ভোগ দিতেন। রাজা পৃথ্বীচাঁদ সিংহ মারা যাওয়ার পর তাঁর বংশধররা মায়ের পুজো চালু রেখেছিলেন। ইংরেজ আমলে রাজার বংশধররা ডুমরাডাঙ্গি ছেড়ে চলে যায়।
রাজ পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ডুমরাডাঙ্গির বাসিন্দা লালকিশোর সিংহের। রাজার বংশধররা চলে যাওয়ার পরে তিনি নিজের হাতে প্রতিমা গড়ে জুঝারপুরিয়ানি থানে কার্তিকী অমাবস্যার রাতের পরে সকালে পুজো শুরু করেন। রাজার বংশধররা মায়ের মন্দিরের নামে ১০০ বিঘা জমি দান করেন। লালকিশোর সিংহ মারা যাওয়ার পরে তাঁর জামাই খাটুলাল সিংহের বংশধর দেবাশিস সিংহ নিজের হাতে মূর্তি তেরি করে পুজো শুরু করেন। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, রাজ আমল থেকেই মায়ের পুজো হয়ে আসছে দিনের বেলায়। ডুমারডাঙ্গি গ্ৰামে মূর্তি তেরি করে, কাঁধে করে ১ কিমি ধান জমির মধ্যেদিয়ে নিয়ে এসে জুঝারপুরিয়ানি থানে এনে পুজো করা হয়। রাজ আমলে পুজোর সময় নিজের শরীরের রক্ত দিতেন রাজারা। তবে এখন আর রক্ত দেওয়া হয় না। এলাকার লোকজন প্রায় ২০০ পাঁঠা বলি দেন। সারাদিন পুজো শেষে সন্ধ্যায় বিসর্জন হয় জুঝারপুরানি কালী মায়ের। সারাদিনে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়।
ডুমরাডাঙ্গির বাসিন্দা দিলীপ কুমার সিংহ বলেন,জুঝারপুরিয়ানি কালীপুজো দিনের আলোয় হয়। আমাবস্যা রাতে গ্ৰামের লোকজনরা রাতভর জেগে থাকেন। মায়ের সামনে বসে রামায়ণ সহ হরি নাম সংকীর্তন ও মনসা পালাগান হয়। দিনভর পুজো চলে ও পাঁঠাবলি হয়। করণদিঘি, রায়গঞ্জ হেমতাবাদ, ডালখোলা, কোচবিহার, শিলিগুড়ি সহ পার্শ্ববর্তী পূর্ণিয়া থেকে প্রচুর লোকজন আসে। পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসে। সন্ধ্যা নামতেই মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়।