• কর্মবিরতিতে থেকেও প্রাইভেটে প্র্যাকটিস, স্বাস্থ্যসাথীতে বাদ চুক্তিবদ্ধ ডাক্তাররা
    বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান ও কলকাতা: কর্মবিরতি ছিল শুধুই সরকারি হাসপাতালে! বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে কিন্তু চুটিয়ে প্র্যাকটিস করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আর জি কর আন্দোলনের নামে প্রায় দু’মাস ধরে তাঁদের পকেট ভরার তথ্য সামনে এনেছিল ‘বর্তমান’। তার জেরেই এবার সরকারের সঙ্গে ‘চুক্তিবদ্ধ’ ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্যদপ্তর। তাদের নাম ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’ করা হল স্বাস্থ্যসাথী পোর্টালে। পাঁচশোর বেশি ডাক্তার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বলে সূত্রের খবর। ফলে সরকারি ওই চিকিৎসা বিমা প্রকল্পে তাঁরা আর অনুমোদন পাবেন না। এই সিদ্ধান্তে মাথায় হাত ‘চুক্তিবদ্ধ’ সিনিয়র রেসিডেন্ট (এসআর) ডাক্তারদের।

    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এমডি, এমএস পাশের পর তিন বছরের চুক্তিতে সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে হয় ‘এসআর’দের। চুক্তি অনুযায়ী, তারা প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করতে পারেন না। বিনিময়ে পান মাসে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকার ভাতা। কিন্তু অনেকেই গোপনে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। অভয়ার বিচার চেয়ে কর্মবিরতি আন্দোলনের ফাঁকেই এমন অন্তত ৫৬৩ জন ‘এসআর’ শুধু স্বাস্থ্যসাথী থেকেই আয় করেছেন প্রায় সাড়ে ৫৪ কোটি টাকা। এই তথ্য সামনে আসতেই টনক নড়েছে স্বাস্থ্যদপ্তরের। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের আগে চিকিৎসকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর আপলোড করতে হয় স্বাস্থ্যসাথী পোর্টালে। তারপরই টাকা অনুমোদন করে সরকার। এখন সেই পোর্টালেই পাঁচশোর বেশি ‘চুক্তিবদ্ধ’ চিকিৎসকের নামে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

    বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম। তিনি বলেন, ‘চুক্তিবদ্ধ’ চিকিৎসকদের বেসরকারি জায়গায় প্র্যাকটিস করতে হলে স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছ থেকে ‘এনওসি’ নিতে হবে। সব জায়গায় এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। তাই ওই চিকিৎসকদের নাম বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর পোর্টালে আপলোড করা যাবে না। তিন দিন আগে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রোগেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হাসপাতাল অ্যাসোসিয়শনের চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন। তিনি আরও জানান, শুধু ডায়ালিসিসের ক্ষেত্রে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার জন্য‌ রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই মতো আজ, শনিবার পর্যন্ত বেসরকারি ক্ষেত্রে ডায়ালিসিসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

    এপ্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী বিভাগের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, এটা তো নিয়মই যে, ‘চুক্তিবদ্ধ’ চিকিৎসকদের প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করতে পারেন না। সকলে সেকথা জানেনও। তাই স্বাস্থ্যসাথী পোর্টালে তাঁদের চিহ্নিত করার আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাছাড়া এভাবে তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে! কেউ কেউ অন্যায়ভাবে সুযোগ নেওয়ায় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। আগস্ট থেকে অক্টোবর, আর জি কর আন্দোলন পর্বে শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই ২৯ কোটি ৩৩২ লক্ষ টাকার চিকিৎসা হয়েছে নার্সিংহোমগুলিতে। অন্যান্য জেলাগুলিতেও অঙ্কটা প্রায় একই।

    সরকার কড়া পদক্ষেপ নিতেই ঘুম ছুটেছে ‘এসআর’দের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক ডাক্তারের বক্তব্য, ‘বৃহস্পতিবার নার্সিংহোমে অপারেশন ছিল। কিন্তু পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন নম্বর আপলোড করার সময় দেখা যায়, তা নিচ্ছে না।’ যদিও আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমনই ‘চুক্তিবদ্ধ’ এক চিকিৎসকের সাফ কথা, সরকারের এই সিদ্ধান্তে নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিই সমস্যায় পড়বে। তাঁর মতে, এমন নিয়ম বেশিদিন থাকলে অনেক চিকিৎসক চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকার মাসে যে বেতন দেয়, অনেকে কয়েক দিন প্র্যাকটিস করেই তার থেকে বেশি আয় করেন। তাঁরা কেন শুধু সরকারি হাসপাতালে পড়ে থাকবেন? তবে আর এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, বন্ড থাকলে চাকরি ছাড়তে হলে সরকারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা জমা দিতে হয়। সেটা করতে কতজন রাজি হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)