নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: বাতিল হয়ে যাওয়া বা পুনর্নবীকরণ না-হওয়া লাইসেন্সের তালিকা ধরে ওই নম্বরেই আবার রেজিস্টার্ড মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার (আরএমপি) সার্টিফিকেট ইস্যু করতেন ইউনানি মেডিসিনের অভিযুক্ত কর্তা ইমতিয়াজ হুসেন। স্টেট কাউন্সিল অব ইউনানি মেডিসিনের রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে এই তথ্যই উঠে এসেছে পুলিসের কাছে। এই কাজে যারা তাঁকে সাহায্য করেছে, তাদেরও চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা।
ইউনানি কর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে অফিসাররা জানতে পারছেন, কয়েকবছর আগে ইউনানি চিকিৎসাকে স্বাস্থ্য পরিষেবার মূল ধারায় আনার উদ্যেগ নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় যে, সরকার-স্বীকৃত ডিগ্রি ছাড়া কেউই এই চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারবেন না। অতএব ইউনানি চিকিৎসার জন্যই স্টেট ইউনানি কাউন্সিল থেকে ডিগ্রি নিতে হবে। ডিগ্রি ছাড়াই, কবিরাজসহ অনেকে যে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছিলেন সেটা আর কেউই করতে পারবেন না। তখন তাঁদের নাম এই কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঠিক হয়, যাঁরা নাম লেখাবেন তাঁদের কিছু কোর্স পড়িয়ে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। সেই অনুমতিপত্র প্রতিবছর রিনিউও করতে হবে তাঁদের।
এই তালিকা ইউনানি স্টেট কাউন্সিল থেকে সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। সেটি কাটাছেঁড়া করতে গিয়েই তাঁদের নজরে এসেছে যে অন্তত ৯০০ জনের নামের উপর ‘হোয়াইটনার’ দেওয়া! বস্তুত নানাসময়ে বিভিন্ন কারণে ওই নামগুলি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসে স্বাস্থ্যদপ্তরেরও। তাদের সন্দেহ হওয়ায় ওই চিহ্নিত রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলি আলাদা করে রাখা হয়। নতুন রেজিস্টার খাতা মিলিয়ে খোঁজা শুরু হয় এই রেজিস্ট্রেশন কেউ ব্যবহার করছেন কি না। সেখান থেকেই অফিসাররা দেখেন যে ওই নম্বরগুলি অন্যরা ব্যবহার করছেন, যাঁরা ডিগ্রি পেয়েছেন বছর দুই বা তিন আগে। জাল রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখিয়ে চেম্বারও খুলে বসেছেন তাঁরা। এমনকী প্রেসক্রিপশনেও এই নম্বর লেখা হচ্ছে। ব্যবহৃত হচ্ছে রিনিউ না-করানো ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন নম্বরও।
তদন্তে দাবি করা হয়েছে, গোটাটাই হয়েছে ইমতিয়াজের আমলে। ওই কর্তা তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তিকে দিয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করতেন। এই সার্টিফিকেট যাঁরা কিনতেন, অফিসের বাইরে তাঁদের দেখা করতে বলা হতো। সেখানেই কর্তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি এসে এই জাল সার্টিফিকেট দিয়ে যেতেন। এর জন্য পুরো টাকা আগেই নিয়ে নিত এই চক্র। ওই টাকা সরাসরি ইউনানি কর্তার কাছে যেতে বলেই অভিযোগ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা।