শ্যামাপোকা হীন শ্যামাপুজো, পরিবেশের পক্ষে অশুভ সঙ্কেত!
বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া ও কল্যাণী: ধান গাছে ব্যবহৃত কীটনাশকের ফলে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে শ্যামাপোকা। ফলে জন্ম নিচ্ছে না। ফলে কালীপুজোয় তাদের দেখা নাই। যতই ভনভন করে উড়ুক। যতই নাকে-কানে-মুখে ঢুকে অস্বস্তি বাড়াক, কালীপুজোর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী ছিল পোকাগুলি। গত দু-একবছর ধরে তারা নিরুদ্দেশ। তাই কি কালীপুজোর রাত একটু ফাঁকা। ‘কি যেন একটা নেই’ বলে একটু আফসোস।
পতঙ্গবিদরা কিন্তু বিষয়টিকে এত সহজে ছেড়ে দিতে রাজি নন। পরিবেশকর্মী চিত্রক প্রামাণিক বলেন, ‘ধান গাছে অতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করা, সিএফএল ও এলইডি আলোর ব্যবহার দূষণ ঘটায়। শ্যামাপোকা কমার এটাই অন্যতম কারণ। পরিবেশ রক্ষায় ক্ষুদ্র একটি পোকা, পিঁপড়ে, প্রজাপতিরও গুরুত্ব রয়েছে। সেইরকম শ্যামাপোকারও গুরুত্ব। সে না থাকলে বহু প্রাণীর খাদ্যসঙ্কট দেখা দেবে। তারা হারিয়েও যাবে। এই কারণে বাঁচাতে হবে সবাইকে। শ্যামাপোকা কমে যাওয়া পরিবেশের পক্ষে অশুভ সঙ্কেত।’
সাধারণত কালীপুজোর সময় শ্যামাপোকার দেখা মেলে। এদের প্রধান খাদ্য ধান গাছের রস। ধান উৎপাদনকারী রাজ্যেগুলিতেই এদের দেখা যায়। আলোর উৎসের প্রতি এদের ঝোঁক। আলো দেখলে সেদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায়। কিছু মারা পড়ে। বেঁচে থাকে বাকিরা। রাজ্যবাসীর অনুযোগ, গত কয়েকবছর ধরে এই পোকা আর সেভাবে উড়ে আসছে না। উলুবেড়িয়া থেকে উত্তর ২৪ পরগনা। কল্যাণী থেকে কলকাতা। শহরাঞ্চলে তো নেই-ই, গ্রামের দিকেও ক্রমে কমছে শ্যামাপোকা। আর আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে পরিবেশে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, শ্যামাপোকা কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। বাগনান কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক ও গবেষক ডঃ আক্রামুল হক বলেন, ‘কীটনাশক স্প্রে করার ফলে এইসব পোকার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তা খেয়ে পোকাগুলি প্রথমে সাদা হয়ে যাচ্ছিল। আমার সন্দেহ, এর ফলে শ্যামাপোকা তার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সে কারণেই দেখা যাচ্ছে না। শ্যামাপোকা শুধু নয়, সব ধরনের পোকার ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা অশনি সঙ্কেত।’ দেখা নাই বলে কল্যাণীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে। হচ্ছে বিস্তর লেখালেখি। শহরাঞ্চলে মোটেও দেখা যায়নি শ্যামাপোকা। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কিছু জায়গায় অল্পবিস্তর দেখা মিলেছে বলে লিখেছেন কয়েকজন। কল্যাণী শহরের বাসিন্দা শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, ‘শ্যামাপোকা হীন শ্যামাপুজো দেখলাম। বুঝতে পারছি না সভ্যতার ঠিক কোন জায়গায় অবস্থান করছি।’ কলকাতার প্রবীণ নাগরিক অর্ধেন্দু সরখেল বলেন, ‘নাকেমুখে ঢুকত বটে তবে কালীপুজোর সময় আপনজন ছিল পোকাগুলি। পোকা উড়ছে বলে বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। আর সে সুযোগ নেই। দুনিয়াটা পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। বেশিদিন বাসযোগ্য থাকবে না।’