নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া: শুধু শব্দেই থামল না তাণ্ডব। শহরের প্রাণকেন্দ্রে আগুনে ভস্মীভূত হল ফ্ল্যাট। আর হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ গেল তিন শিশুরও। খলনায়ক হয়ে থাকল দীপাবলির রাত।
বাজি পোড়াতে গিয়েছিল তারা। তানিয়া মিস্ত্রি (১১), ঈশান ধারা (৩) ও মমতাজ খাতুন (৫)। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেড়িয়ার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গারামপুরে। বেসমেন্টের ছোট্ট ঘরে বাজি থেকেই আগুন ধরে যায়। ঘরে ছিল দাহ্য পদার্থ। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়ে ওঠে আগুন। এমন পরিস্থিতিতে ওই তিন শিশু বের হতে পারেনি। বেসমেন্টের ঘরের ভিতরেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় তারা। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিস বাহিনী ও দু’টি দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছয়। ছুটে যান রাজ্যের মন্ত্রী পুলক রায়ও। বাড়ির ঢিল ছোড়া দূরত্বে দমকল স্টেশন। তাই পৌঁছতে বেশি দেরি হয়নি। তবে সরু রাস্তা হওয়ায় বেসমেন্টে পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে দমকল কর্মীদের। ওই বাড়ি থেকে মোট ৬ জনকে উদ্ধার করেন দমকল কর্মীরা। তাদের মধ্যে দু’জন একতলায় ও একজন ছাদে আটকে ছিল। ১৯ বছরের মনীষা খাতুনকে গুরুতর অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া বাকি দু’জনকে স্থানীয় শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। ওই বাড়ির মালিক কাজল মিস্ত্রির পালিত কন্যা তানিয়া। কাজলবাবুর বক্তব্য, ‘বাচ্চারা চরকি নিয়ে খেলছিল। তার থেকেই কাপড়ে আগুন লাগে। আর বের হতে পারেনি।’ তাঁর দাদার ছেলে ঈশান ও বাড়ির পরিচারিকার মেয়ে মমতাজ।
বাজির রোষানল থেকে ছাড় পায়নি শহর কলকাতাও। কালীপুজোর গভীর রাতে উল্টোডাঙ্গার অভিজাত আবাসনের ১৩ তলায় আচমকা আগুন লেগে যায়। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, বাজি পোড়ানোর কারণেই আগুন লেগেছে। এই ঘটনায় বছর চল্লিশের মুকেশ বালাসিয়াকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৩ তলার ফ্ল্যাটে আগুন দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় এলাকায়। ঘটনাস্থলে ৩টি দমকলের ইঞ্জিন আসে। ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছে যান ৩ নম্বর বোরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউতও। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘এই ফ্ল্যাটে যে সংস্থা আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, ওই সময় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কোনও কাজ করেনি।’ এমনিতেই ১৩ তলায় পৌঁছতে দমকলকে বেশ বেগ পেতে হয়। তার উপর ফ্ল্যাটের ছাদের জলের ট্যাঙ্কে পর্যাপ্ত জলও ছিল না বলে অভিযোগ।
এছাড়াও, উল্টোডাঙা থানা এলাকায় বেলগাছিয়া মেট্রোর সামনে একটি পুজো মণ্ডপে বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগে। এই রাতেই হেয়ার স্ট্রিট, গল্ফ গ্রিন, ভবানীপুর, কালীঘাট, আনন্দপুর, এন্টালি, সার্ভে পার্ক থানা এলাকাতেও আগুন লাগে। তবে সেখানে হতাহতের খবর নেই।