• নিয়ম শিথিলের সিদ্ধান্ত আবাসের তালিকা যাচাইয়ে
    আনন্দবাজার | ০২ নভেম্বর ২০২৪
  • আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকা তৈরি ছিল আগে থেকেই। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, পুনরায় যাচাই করতে গিয়ে আবাসের উপভোক্তা তালিকায় এলাকাভিত্তিক ভাবে নাম বাদ যাওয়ার সংখ্যায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি হেরফের হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে জেলা প্রশাসনগুলি। এই অবস্থায় গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়া উপভোক্তা-তথ্যও যাচাইয়ের নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে, জেলাশাসকদের উদ্দেশে নবান্নের বার্তা— যাচাই পর্বে মূল উপভোক্তা অনুপস্থিত থাকলেও তা আটকাবে না। বরং সংশ্লিষ্টের পরিবারের বাকি সদস্যদের সই এবং ছবি নিয়ে হওয়া যাচাইকে বৈধ বলেই ধরে নেওয়া হবে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, উপভোক্তা তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া এবং অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিয়ে যে অভিযোগ এবং অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, তা মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ করতে চাইছে রাজ্য।

    আবাস যোজনার তালিকা যাচাইয়ে বহু নাম বাদ পড়ছে। তা নিয়ে বহু এলাকায় তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। বাদ যাওয়া উপভোক্তাদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন অন্য উপভোক্তার তালিকাভুক্তির যথার্থতা নিয়েও। ইতিমধ্যেই নিয়মের কড়াকড়ি শিথিল করে ‘মানবিক’ হয়ে তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, যাচাই পর্বে কোনও ব্লকে স্বাভাবিকের থেকে বেশি উপভোক্তার নাম বাদ যাচ্ছে। আবার কোথাও স্বাভাবিকের থেকে বেশি উপভোক্তার নাম তালিকাভুক্ত হচ্ছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। কারণ, আবাস যোজনার তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে ছিল। ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রায় ১১ লক্ষ উপভোক্তা সম্বলিত তালিকাকে অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রও। তার পরেও গত প্রায় দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে এই প্রকল্পে। আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগামী মাস থেকে আবাস-উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির টাকা রাজ্য সরকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে গত মাস থেকে যাচাই শুরু হয়। কিন্তু তাতে বিপুল সংখ্যক নাম বাদ যাওয়া বা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়। সেই কারণেই সম্ভবত এমন লিখিত বার্তা জেলাশাসকদের পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০% নাম বাদ পড়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, “নতুন নাম উপভোক্তা তালিকায় যুক্ত হবে না। শুধুমাত্র যাঁদের কাঁচা বাড়ি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের বাড়ি করে দেওয়া হবে মানবিক দিক থেকে।”

    প্রথম বার্তায় বলা হয়েছে, বাদ যাওয়া নামের পুনর্যাচাইয়ের দেখভাল জেলা প্রশাসনই করবে। জেলা-কর্তারা গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক তথ্যের যাচাইও করবেন। তাতে নাম বাদ যাওয়া বা অন্তর্ভুক্তিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়া তথ্যগুলি খতিয়ে দেখা হবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ফের উপভোক্তা-যাচাই হবে। আংশিক ভাবে ইটের তৈরি কোনও দেওয়াল বা গাঁথনি (ব্রিক বেস) থাকা বাড়ির উপভোক্তা আবাস চাওয়ার কারণে বাদ পড়ে থাকলে, সেই তথ্য পুনর্যাচাই করতে হবে। ব্লকস্তরের সমীক্ষকের আপলোড করা ছবির যাচাই ছাড়াও চিহ্নিত করতে হবে ‘সন্দেহজনক’ ভাবে বাদ পড়া ঘটনাগুলিকে। ব্লকস্তর ছাড়াও একই যাচাই জেলাস্তরেও হবে। যেখানে বাতিল বা অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা খুব বেশি বা কম, সেখানে আরও নিবিড় ভাবে যাচাই করতে হবে। দরকারে সেই ব্লক বা এলাকার গোটা অংশে ফের সমীক্ষা হবে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, “এটাই আসল। কারণ, বিপুল হারে যে বাদ যাচ্ছিল, সেগুলো তো খতিয়ে দেখতে হবে। তাই গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়া তথ্যগুলি যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার সঙ্গে ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপভোক্তাদের পরিস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে।”

    দ্বিতীয় বার্তায় জেলাশাসকদের নবান্ন জানিয়েছে, কোনও পরিবারে যাচাই করতে গিয়ে যদি দেখা যায় মূল উপভোক্তা অনুপস্থিত, তাতে সংশ্লিষ্টের (বিবাহিত হলে) স্ত্রী, মা, বাবা এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র বা কন্যার কারও ছবি এবং সই নিয়ে যাচাই সম্পূর্ণ করা যাবে। স্বামী বা স্ত্রী মারা গিয়ে থাকলে অথবা অবিবাহিত হলে এই পদ্ধতিটির প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে সেই পরিবারের বাকি সদস্যদের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জব-কার্ড থাকতে হবে।

    স্থির হয়েছে, শীঘ্রই জেলায় জেলায় মন্ত্রী এবং সচিব পর্যায়ের নজরদারি প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেখানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতির খোঁজখবর নেওয়া হবে শীর্ষস্তর থেকে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)