ভোটকুশলী সেই প্রশান্ত কিশোর (পিকে) তাঁর গ্রাহক রাজনৈতিক দলগুলির থেকে কত টাকা পারিশ্রমিক নিতেন, তা নিয়ে জল্পনা ছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। এ বার পিকে নিজেই জানিয়ে দিলেন সে কথা। তাঁর গড়া রাজনৈতিক দল ‘জন সুরাজ পার্টি’র এক কর্মসূচিতে শুক্রবার বিহারের বেলাগঞ্জে পিকে জানান, নির্বাচনপিছু তাঁর দক্ষিণার অঙ্ক অন্তত ১০০ কোটি টাকা! তিনি বলেন, ‘‘এখন অন্তত ১০টি রাজ্যের সরকার আমার পরামর্শের জোরে গঠিত হয়েছে। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমি ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি নিয়েছি।’’ অর্থাৎ, নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে তৃণমূলকেও এই পরিমাণ টাকাই দিতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে বাংলায় নিয়ে আসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পারিশ্রমিক নিয়ে তৃণমূলের ভিত মজবুত করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক-পিকে জুটিই ছিল ২০২১ সালে নীলবাড়ির লড়াইয়ে তৃণমূলের অন্যতম চালিকাশক্তি। ২০২১ সালে তৃণমূলের হয়ে ভোটের কৌশল রচনা করার সময় পিকের মন্তব্য ছিল, ভোটবাক্সে বিজেপি তিন অঙ্কের সংখ্যা পেরোলে ভোটকুশলীর পেশা ছেড়ে দেবেন তিনি। তা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি তাঁকে। কিন্তু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দেখা যায়, প্রশান্তের কথাই অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছে।
কিন্তু চলতি বছরের লোকসভা ভোটে বাংলায় পিকের পূর্বাভাস মেলেনি। গত এপ্রিলে ভোটপর্বের মাঝে পিকে জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বেশি আসন পাবে বিজেপি। পিকে বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের শুনে আশ্চর্য মনে হলেও আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গে এক নম্বর দল হতে চলেছে বিজেপি।’’ কিন্তু ভোটের ফল বলছে, তৃণমূলের অর্ধেক আসনও আসেনি বিজেপির ঝুলিতে। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা ভোটের পরই পরামর্শদাতার ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন পিকে। আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘আইপ্যাকে’র সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না বলেও জানিয়ে দেন তিনি। তবে তাঁর তৈরি সংস্থা ‘আইপ্যাক’ তৃণমূলের পরামর্শদাতা হিসেবে রয়ে গিয়েছে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগেও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক টানা দু’মাসের যে জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়েছিলেন, তার ব্যবস্থাপনাতেও পিকের তৈরি সংস্থার ‘ভূমিকা’ ছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।