• বিভিন্ন মন্দিরে গিরি গোবর্ধনের পুজো উপলক্ষ্যে পালিত হল অন্নকূট উৎসব
    বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: শনিবার গিরি গোবর্ধন পুজো উপলক্ষ্যে নবদ্বীপের রাস্তায় ভক্তদের ঢল নামল। এদিন মন্দিরগুলিতে অন্ন দিয়ে তৈরি করা হয় পুরাণের গোবর্ধন পর্বত। কোনও মন্দিরে দু’ফুট, কোনও মন্দিরে তিন ফুট উচ্চতার পর্বতের প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। নানা রকমের ভাজা এবং বিভিন্ন ব্যঞ্জন এবং মিষ্টি দিয়ে চোখ, নাক, মুখ, কান আঁকা হয় গিরিরাজের। কচু শাক দিয়ে চোখ ও চোখের ভুরু, চোখের মণি তৈরি করা হয় কালো পান্তুয়া দিয়ে খিচুড়ি দিয়ে তিলক পুষ্পান্ন দিয়ে দু’পাশের কপাল করা হয় তবে লাল শাক দিয়ে ঠোঁট আর বকফুলের পকোড়া দিয়ে কান করা হয়। এমনকী বিভিন্ন ব্যঞ্জনের বাটি দিয়ে থরে থরে সাজিয়ে তৈরি করা হয়, গলার মালা। পুজোর পর তা ভেঙে ভক্তদের বিতরণ করা হয়। ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির, জন্মস্থান মন্দির, রাধা মদনমোহন মন্দির, বলদেব জিউ মন্দির, রাধা মদনগোপাল মন্দির, শ্রীশ্রী নিতাই গৌর সঙ্ঘ আশ্রম, চিন্তামণি কুঞ্জ সহ শতাধিক মন্দিরে এই অন্নকূট উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ।

    এই অন্নকূট উৎসবের এক পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো করতেন বৃন্দাবনবাসী। গোবর্ধন পাহাড় কেন্দ্রিক পশুপালন ও কৃষি ছিল বৃন্দাবনের ব্রজবাসীদের প্রধান জীবন জীবিকা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে, গিরিরাজ ক্ষেত্র এবং গোসম্পদ তোমাদের অন্নদান করে, তাই তোমরা সেই গিরিরাজ এবং গোবর্ধনের পুজো করো। ব্রজবাসীরা আগে দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো করতেন। কৃষ্ণের কথা শুনে তাঁরা ইন্দ্রের পুজো বন্ধ করে দেন। বিষয়টি জানতে পেরে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁদের প্রতি রুষ্ট হয়ে ঝড়বৃষ্টি দিয়ে বৃন্দাবনকে ধ্বংস করতে চাইলেন। শ্রীকৃষ্ণ ব্রজবাসীদের রক্ষা করতে তখন গোবর্ধন পাহাড়কে  হাতের  কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে তুলে ধরেন। ইন্দ্র ব্রজবাসীদের কোনও ক্ষতি করতে পারেননি l ইন্দ্র পরাস্ত হন। তিনি কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পারেন। এরপর থেকেই এই তিথিতে ব্রজবাসীরা গিরিরাজ গোবর্ধনের পুজো শুরু করেন। এই তিথিতে তাঁর উদ্দেশ্যে পর্বতের মতো অন্ন, নানাবিধ ব্যঞ্জন এবং অন্যান্য খাবার সাজান। এই উৎসবই অন্নকূট নামে পরিচিত।

    এদিন অনেক গৃহস্থের বাড়িতেও এই অন্নকুট উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। মদনমোহন মন্দিরের সেবায়েত নিত্যগোপাল গোস্বামী বলেন, গোবর্ধন পুজো হচ্ছে প্রকৃতির আরাধনা। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত জগৎ চরাচরে বিরাজ করছেন। গিরিরাজ গোবর্ধন সমগ্র জগৎ প্রকৃতি এবং গাভী গোবৎস সমস্ত প্রাণীকুলের প্রতীক। 

    রাধা মদনগোপাল মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত কৃষ্ণগোপাল গোস্বামী বলেন, এদিন গোবর্ধন পর্বতের ন্যায় অন্ন সাজিয়ে তার চারিধারে ৫৬ রকমের ভোগ নিবেদন করা হয়েছিল।

    গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের মহাসচিব কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, ভক্তদের ধারণা, অন্নকূটের প্রসাদ গ্রহণ করলে কোনদিনও কারও অন্নের অভাব হয় না। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত সুদিনকুমার গোস্বামী বলেন, এদিন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরেও গিরি গোবর্ধনের পুজো অনুষ্ঠিত হয়। যা দেখতে ভিড় করেছিলেন অসংখ্য ভক্ত। ইসকন সুত্রে জানা গিয়েছে, এদিন মায়াপুর ইসকনের রাধামাধবের মন্দিরে গোবর্ধন পুজোর আয়োজন করা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)