আবদার মেটাতে কেনা আতশবাজি দেওয়া হল না একরত্তি মেয়েকে
বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: মাঠে ধান কাটতে গিয়েছিলেন বাবা-মা। ছ’বছরের মেয়ে সকাল থেকে তাঁদের সঙ্গেই ছিল। দুপুরে বাড়ি ফিরে বাবার কাছে মাংস খেতে চেয়েছিল। আর চেয়েছিল আতশবাজি। বাবা সেই একরত্তি মেয়ের আবদার ফেলেন কী করে? সেই মতো বাজারেও যান। যাওয়ার সময় দেখে যান বাড়ির সামনে কালীপুজোর মণ্ডপ দেখার জন্য মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্ত্রী বলেছিলেন, মেয়েকে স্নান করাবেন, তাই বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে। সেকথা মেয়েকে বলে বাবা বাজারে চলে যান। কিন্তু ফিরে এসে আর মেয়েকে খুঁজে পাননি। এরপর প্রতিবেশী একজনের বাড়ির জানালায় উঁকি দিতেই দুই অভিযুক্তকে ঘরের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা। বিছানার উপর পড়েছিল মেয়ের গেঞ্জি ও প্যান্ট। এক অভিযুক্ত জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। অপর জন ওই শিশুকন্যাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। শিশুকন্যার বাবা তখন মেয়েকে পুকুর থেকে তুলে হাসপাতালে ছোটেন।
শুক্রবার ফালাকাটার ধনীরামপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বীভৎস ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। শনিবার নির্যাতিতা সেই শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কোচবিহারের মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আসেন মৃত শিশুর বাবা, মামা সহ অন্যান্যরা।
মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বিহ্বল বাবা বললেন, মেয়ে মাংস খেতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, বাজার থেকে মাংস নিয়ে আসব। স্নান সেরে বাজার যাচ্ছিলাম। আমি ওকে বাড়ি যেতে বলেছিলাম। সেসময় ও আমাকে আতশবাজি নিয়ে আসতে বলে। আমি বাজার থেকে সেসব নিয়ে আসি। এসে দেখি মেয়ে নিখোঁজ। দু’তিন মাস আগে অভিযুক্ত আমার মেয়েকে চকোলেট দিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেসময় মেয়ে বলেছিল, লোকটি খারাপ কথা বলে। মেয়েকেও ওই বাড়িতে যেতে নিষেধ করেছিলাম। খোঁজাখুঁজির সময় সন্দেহ হওয়ায় ওই বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। তখন সেখান থেকে চলে আসি। এরপর আবার সেখানে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখি, দুই অভিযুক্তের গায়ে রক্ত। মেয়ের গেঞ্জি ও প্যান্ট বিছানার উপর পড়ে রয়েছে। একজন জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। অন্যজন মেয়েকে পুকুরে ফেলে দিয়ে পালায়। আমি মেয়েকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে যাই। সেসময় আমি আমার সন্তানকে ধরব না অভিযুক্তকে ধরব? তিনি আরও বলেন, আমার একরত্তি মেয়েকে ধর্ষণ করে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। আমি অভিযুক্তের ফাঁসি চাই।
মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে বসে এদিন কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতা শিশুর বাবা। তিনি পেশায় ছোট গাড়ির চালক। স্ত্রী গৃহবধূ। সংসার চালাতে মাঝেমধ্যে জমিতে ধান কাটার কাজও করেন। আদরের একমাত্র মেয়েকে স্থানীয় শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি করেছিলেন। মেয়ের জন্য মাংস, আতশবাজি নিয়ে এলেও তা যে আর একরত্তির হাতে তুলে দেওয়া হল না!