কাজে গাফিলতি রুখতে পূর্ব রেলে শ্যান্টম্যানদের বুকে বডি ক্যামেরা, উদ্যোগ শিয়ালদহ ডিভিশনে
বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রেলের অন্যতম ব্যস্ত ডিভিশন শিয়ালদহ। দৈনিক প্রায় ১৬ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করে এই ডিভিশনে। প্রতিদিন ৮৮৯টি লোকাল চলাচল করে। পাশাপাশি কয়েকশো দূরপাল্লার ট্রেন ছোটে এই ডিভিশনে। ট্রেনগুলি যাত্রী নামানোর পর ইয়ার্ডে ফেরে। আবার সেখান থেকেই প্ল্যাটফর্মে আসে। ট্রেন পরিচলন ব্যবস্থার মূল ভিত এই ইয়ার্ড। সেখানেই রেকের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষন ও ট্রেন ভেদে কোচের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি বা পরিবর্তনের মতো কাজগুলি হয়। সার্বিকভাবে এই গোটা ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে যে রেলকর্মীরা থাকেন, তাঁদের ‘শ্যান্টম্যান’ বলা হয়। পূর্ব রেলের অধীন শিয়ালদহ ডিভিশন এই প্রথম শ্যান্টম্যানদের কাজে ধারাবাহিক নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা এই প্রক্রিয়া চলবে। যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে দুর্ঘটনার সামান্যতম আশঙ্কাকে সমূলে উৎখাত করতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিভিশনের এক কর্তা বলেন, ‘যাত্রীশূ্ন্য ট্রেন ইয়ার্ডে আসা-যাওয়ার পথে মাঝেমধ্যে বেলাইন হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কয়েকমাস আগে হাওড়া স্টেশনে এরকমই এক ঘটনায় প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে শতাধিক ট্রেনের পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছিল। চরম দুর্ভোগ সইতে হয়েছিল যাত্রীদের। এই ধরনের ঘটনা এড়াতেই নয়া পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’
জানা গিয়েছে, শ্যান্টম্যানদের কাজে নজরদারি চালাতে ‘ফোকাস’ (ফিল্ড অবজারভেশন ফর কাউন্সেলিং অ্যান্ড আপহোল্ডিং সেফটি) প্রযুক্তি কার্যকর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শ্যান্টম্যানদের বুকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বডি ক্যামেরাগুলি রাতের অন্ধকারেও ছবি তুলতে পারবে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকবে টক-ব্যাক নামে এক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে কন্ট্রোল রুমে বসে অফিসাররা সরাসরি শ্যান্টম্যানদের কাজ দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজনে কথাও বলতে পারবেন। জানা গিয়েছে, ইয়ার্ডে অনেক সময় তাড়াহুড়োতে ট্রেনের চাকায় ‘তালা’ পরাতে ভুলে যান শ্যান্টম্যানরা। সেক্ষেত্রে ইন্টারলকহীন ইয়ার্ডের লাইনে অনেক সময় ‘পয়েন্ট বাস্ট’ করে। এছাড়াও বিবিধ কারিগরি কাজে সামান্য গাফিতলির জেরেই বড়সড় বিঘ্ন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এই নজরদারির ব্যবস্থা।
এ প্রসঙ্গে রেলের এক কর্তা বলেন, ‘লাইনে নেমে রোদে-জলে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে কাজ করতে হয় শ্যান্টম্যানদের। ফিল্ডে নেমে কোনও সমস্যা হলে সঠিক পরামর্শ পাওয়ারও সুযোগ ছিল না। এক্ষেত্রে কোনও জটিল সমস্যায় টক-ব্যাকের মাধ্যমে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পাবেন শ্যান্টম্যানরা।’ সেই সঙ্গে তাঁরা বাড়তি সুরক্ষাকবচ পাবেন বলে দাবি ওই কর্তার। জানা গিয়েছে, পাইলট প্রকল্প হিসেবে ইতিমধ্যে শিয়ালদহ ডিভিশনে ১০টি ক্যামেরা চলে এসেছে। এক-কিটির দাম ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে এই ডিভিশনে ১ হাজার ৬৬৩ জন শ্যান্টম্যান আছেন।