• কুলকুচি করে মদ মহিলার গায়ে, প্রতিবাদী দম্পতিকে বেধড়ক মার
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: হাতে মদের বোতল। কালীপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় চলছে উদ্দাম নাচ। মাঝেমধ্যেই সেই বোতল থেকে ফোয়ারার মত ওড়ানো হচ্ছে মদ। তখন পাশ দিয়ে বাইকে যাচ্ছিলেন এক দম্পতি। মদ এসে পড়ে তাঁদের গায়ে। প্রতিবাদ করতেই মুখের ভিতরে থাকা মদ ফের উগরে দেওয়া হয় মহিলাকে লক্ষ্য করে। সেই সঙ্গে বেধড়ক মারধরও করা হয় ওই দম্পতিকে। শনিবার রাতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী থাকল শান্তিপুর। তার চেয়েও বড় কথা, ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেটি পুলিস ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব। স্বভাবতই প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাতে শহরের নিরাপত্তা এবং শোভাযাত্রায় পুলিসের ভূমিকা। 

    ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় সরব হয়েছে শান্তিপুরবাসী। পড়শি শহর কৃষ্ণনগরে শোভাযাত্রা নিয়ে গোলামাল, মারপিটের ঘটনা বারবার সামনে এসেছে। সেক্ষেত্রে শান্তিপুরের অবস্থান অনেকটাই ভালো ছিল এতদিন। কিন্তু, শনিবারের রাতে শোভাযাত্রা থেকে এভাবে এক মহিলার সম্মানহানির ঘটনায় বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছে পুলিস প্রশাসন। একাধিক প্রাচীন কালীপুজোকে ঘিরে শান্তিপুরের একটা আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। সেখানে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত বলে জানিয়েছেন শহরে বসবাসকারী বহু প্রবীণ মানুষ। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিপুরের শ্যামবাজার এলাকা দিয়ে শান্তিপুর রেল স্টেশন এবং গোডাউন মাঠের দিক থেকে পরপর তিনটি প্রতিমার বিসর্জনের শোভাযাত্রা যাচ্ছিল কাশ্যপপাড়ার দিকে। রাত তখন দশটা। ঠিক সেই সময় স্ত্রী রিমি করকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন স্বামী সৌরভ কর। তাঁদের বাড়ি লাইব্রেরি সংলগ্ন দত্তপাড়ায়। অভিযোগ, শোভাযাত্রায় মদের ফোয়ারা উড়ছিল। বোতলের ছিপি খুলে ছিটানো হচ্ছিল সবার গায়ে। ওইসব মদ্যপ যুবকদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় মদের ফোয়ারা বারবার ভিজিয়ে দিচ্ছিল সৌরভ-রিমিকে। প্রতিবাদ করেন দম্পতি। তাতে উত্তেজনা বাড়ে। ভিড়ের ভিতর থেকে এক যুবক মুখের ভিতরে থাকা মদও ছুঁড়ে দেন মহিলার গায়ে। সৌরভ আর স্থির থাকতে পারেননি। তিনি কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা।  শুরু হয়ে যায় উভয়ের হাতাহাতি। বেধড়ক মারধর করা হয় সৌরভকে। রাস্তার বেগতিক বুঝে পাশের একটি ওষুধের দোকানে নিজেকে লুকিয়ে রাখেন। সেখানে ঢুকেও মারধর করা হয়। রক্ষা পাননি তাঁর স্ত্রীও। তাঁকেও কিল চড় মারা হয়।  কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার এবং স্থানীয় কয়েকজন যুবক চলে আসেন। তাঁদের মধ্যস্থতায় দু’পক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মারধরে গুরুতর জখম হন দম্পতি। রাতেই শান্তিপুর হাসপাতালে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যান সৌরভ। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সৌরভকে ছে঩ড়ে দেওয়া হলেও তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। পরে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সৌরভ। তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ধরা পড়েনি কোনও অভিযুক্ত। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী। যদিও পুলিসের দাবি, অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)