• ভাই মেনে ফোঁটা দিয়ে অরণ্য রক্ষার শপথ নিলেন ঝাড়গ্রামের মহিলারা
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: কাঁসার থালায় ধান-দূর্বা-চন্দনের বাটি, মঙ্গলদীপ। উলুধ্বনি ও শাঁখ বাজছে, বোনেরা একে একে ফোঁটা দিচ্ছেন। ফোঁটা যারা পাচ্ছে তারা কিন্তু বৃক্ষ। রবিবার কলাবনীর জঙ্গলে ঝাড়গ্ৰামের মহিলারা গাছকে ‘ভাই’ মানার বার্তা দিয়ে অরণ্য রক্ষার শপথ নিলেন। সেই সঙ্গে গাছেদের দীর্ঘায়ু কামনায় উচ্চারিত হল, ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা জমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।

    অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্ৰামের জঙ্গল সুদূর কাল থেকেই বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়স্থল ছিল। স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতির সঙ্গে জঙ্গল ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে। যদিও অরণ্যভূমির সীমা ধীরে ধীরে কমে আসছে। ক্রমাগত বৃক্ষছেদনের জেরে জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যের উপরেও প্রভাব পড়েছে। পরিবেশবিদ থেকে জেলার শিক্ষিতমহল বিষয়টি নিয়ে সোচ্চারও হচ্ছেন। অরণ্য রক্ষায় ঝাড়গ্ৰাম শহরের মহিলারা এবার গাছকে ফোঁটা দিলেন। রবিবার জেলাজুড়ে উৎসাহের সঙ্গে ভাইফোঁটা উৎসব পালিত হয়েছে। 

    তবে শহরের শর্মিষ্ঠা ঘোষ, বৈশাখী ধল, সুজাতা দাস, শুকন্তলা শীটরা এদিন অন্যভাবে ভাইফোঁটা পালন করেছেন। এদিন সকালে দলবেঁধে তাঁরা শহর লাগোয়া কলাবনীর জঙ্গলে যান। রীতি মেনে জঙ্গলের বেশ কয়েকটি শাল, পিয়াল গাছকে ভাইফোঁটা দেন। গাছের কাণ্ডে ভাতৃস্নেহে চন্দনের ফোঁটা দেওয়ার সঙ্গে ধান দূর্বা ছিটিয়ে দেন। শর্মিষ্ঠা ঘোষ বলেন, এই জেলার সকল উৎসব, অনুষ্ঠান অরণ্যভূমির সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে। জেলার বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় হারাচ্ছে। যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। জঙ্গলভূমির মানুষ বৃক্ষকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করেন। আমরা গাছকে এবার ভাই হিসেবেও গ্ৰহণ করলাম। ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনায় যেমন ফোঁটা দিই তেমনই গাছের দীর্ঘায়ু কামনা করে ফোঁটা দিয়েছি। অরণ্য রক্ষায় আমরা এক দীর্ঘ লড়াই শামিল হতে যাচ্ছি। 

    বৈশাখী ধল বলেন, ছোট থেকে নিজেদের দাদা ভাইদের ফোঁটা দিয়ে আসছি। কিন্তু প্রথমবার গাছকে ভাতৃস্নেহে ফোঁটা দিলাম। কলাবনীর জঙ্গলে এদিন সকালে রীতি মেনেই বেশকয়েকটি গাছের কাণ্ডে  চন্দনের ফোঁটা দিয়েছি। ধান দূর্বাও ছিটিয়েছি। শঙ্খ বাজিয়েছি। এই ভাইফোঁটার মধ্যে দিয়ে অরণ্যভূমি রক্ষার বার্তা দিলাম। দলের অপর এক সদস্য সুজাতা দাস বলেন, ভাতৃস্নেহের বন্ধনে এদিন অরণ্যের গাছকে জড়িয়েছি। অরণ্যের গাছ রক্ষার কাজেও সামনের দিনে আমাদের ভূমিকা থাকবে। শহরের বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী সুজিৎ কর্মকার বলেন, দেশজুড়ে জঙ্গল ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় নানা আন্দোলন চলছে। ঝাড়গ্ৰামে জঙ্গল রক্ষায় সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো আন্দোলন কিন্তু সেভাবে হয়নি। অরণ্য রক্ষায় গাছকে ফোঁটা দিয়ে যেভাবে ভাইফোঁটা উৎসব পালন করা হল, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার।
  • Link to this news (বর্তমান)