শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ, ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়
বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: শিশুদেরকে দিয়ে কাজ করালে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের জরিমানা। মুর্শিদাবাদ জেলায় গত দেড় বছরে প্রায় ৩০জন শিশুকে উদ্ধার করেছে ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রটেকশন ইউনিট। তারা যেসব দোকান, হোটেল, কিংবা বাড়িতে কাজ করছিল, তাদের দিতে হয়েছে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা। সেই টাকা সরাসরি চলে গিয়েছে শিশুদের অ্যাকাউন্টে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালে মোট ২০জন শিশুকে উদ্ধার করা হয়। অধিকাংশ দোকান ও হোটেল মালিকের থেকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট ১০জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বয়স ১৮এর নীচে। এদের মধ্যে কয়েকজন শিশুশ্রমিক হিসেবে কায়িক পরিশ্রম করে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিশুদের মধ্যে ১৪ বছরের নীচে রয়েছে ছ’জন শিশু। যাদের সাইকেল সারাইয়ের দোকান, মিষ্টির দোকান, হোটেল ও চায়ের দোকানে কাজে লাগানো হয়েছিল। যে সমস্ত মালিক তাদের কাজে লাগাচ্ছিল তাদের কাছ থেকে মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সেই অর্থ ওই শিশুদের ভরণপোষণের জন্য তাদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভিক্টিম শিশুদের জন্য ম্যাচিং গ্রান্টের ব্যবস্থাও করা হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার একটি থানা এলাকায় এক ১৪ বছরের মেয়েকে বাড়ির পরিচারিকার কাজ করানো হচ্ছিল। তাকে শায়েস্তা করতে বাড়ির মালকিন গরম হাতা ও খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছিল। পরে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় নাবালিকা। রাস্তা থেকে তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠায় জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট। তারপর ওই নাবালিকার ভরণপোষণের জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ওই পরিবারকে। কোনও শিশুকে দিয়ে কঠিন কাজ করালে ও তাকে হেনস্তা করলে নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যায়। এছাড়া ওই শিশুর জন্য ম্যাচিং গ্রান্টের টাকার আবেদন করা হয়। সেখান থেকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে তাকে।
ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার অর্জুন দত্ত বলেন, গত বছর আমরা ২০টি শিশুকে উদ্ধার করি। তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করানো হচ্ছিল। এবছর এখনও পর্যন্ত ৮ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। লেবার ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমাদের জয়েন্ট রেইড হয়। তারপর যারা এই শিশুদেরকে কাজে লাগায় তাদেরকে জরিমানা করা হয়। সেই অর্থ সরাসরি শিশুদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পাশাপাশি এই শিশুদের শিক্ষা এবং ভরণপোষণে ম্যাচিং গ্রান্টের জন্য লেবার কমিশনের কাছে পাঠিয়েছি। এবছর তিনজন শিশুকে সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনজনকে মাসে মাসে আর্থিক সাহায্যের জন্য মিশন বাৎসল্য প্রোগ্রামের অধীনে তাদের স্পনসরশিপ দেওয়ার অনুমোদন মিলেছে। এর ফলে প্রতিমাসে চার হাজার টাকা করে তারা পাবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্তবর্তী জেলায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা একটা উদ্বেগের বিষয়। আমরা বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালাচ্ছি। বিশেষ ড্রাইভ দিয়ে শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু আর্থসামাজিক পরিবেশের চাপে অনেক শিশু পরিবারের জন্য নিজেরাই এই পথ বেছে নিচ্ছে। তাই রিহ্যাবিলিটেশন আগে দরকার। না হলে এক একটি শিশুকে আয়ের পথ থেকে সরিয়ে এনে তাদের পরিবারকে আরও সমস্যার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা আগে করে তারপর শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করতে হবে।