পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার তাজপুরের জলধা সাইক্লোন শেল্টার, ক্ষোভ বাসিন্দাদের
বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাঁথি: ‘ডানা’ সাইক্লোনের প্রেক্ষাপটে রামনগরের সমুদ্রতীরবর্তী তাজপুরের জলধা এলাকায় অবস্থিত মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার হাউস কোনও কাজে না লাগায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। কারণ তাজপুর-দীঘা মেরিন ড্রাইভ রাস্তার পাশে অবস্থিত বিশালাকার এই শেল্টার হাউস সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে একেবারে অচল। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ভবনটি রীতিমতো খাঁ-খাঁ করছে। যেন ভূতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে। আলো, পাখা, পানীয় জল, শৌচালয়-সর্বত্রই ভগ্নদশা স্পষ্ট। ডানা সাইক্লোনের প্রভাবের জেরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সর্বত্রই উপকূলবর্তী এলাকায় শেল্টার হাউসগুলি কাজে লেগেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা এসে সেখানে থেকেছেনও। আর এই ভবনটি অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা আসতে চাননি কিংবা প্রশাসনও পরিস্থিতি দেখে এখানে আনার সাহস দেখায়নি। তাঁরা কিছুটা দূরে চাঁদপুরে অবস্থিত শেল্টার হাউস বা বিভিন্ন হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ বাড়িতেও থেকেছেন। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুধ্ব এলাকাবাসীর প্রশ্ন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত সাইক্লোন শেল্টার হাউস যদি কোনও কাজেই লাগল না, তাহলে কী লাভ হল? তাঁদের দাবি, শেল্টার হাউসটিকে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের মধ্যে দিয়ে নতুনভাবে তৈরি করে কাজে লাগানো হোক।
উল্লেখ্য, রামনগর-১ ব্লকের তালগাছাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জলধা মৌজায় বেশ কয়েকবছর আগে ভবনটি গড়ে তোলা হয়। সমুদ্র তীরবর্তী এই এলাকাটি সবসময় জলোচ্ছ্বাস বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগেই থাকে। এলাকার মানুষকে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। দুর্গত মানুষজনকে আগে স্থানীয় স্কুল কিংবা পাকাবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। সবদিক মাথায় রেখেই এই শেল্টার হাউসটি গড়ে তোলে প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের বরাদ্দ অর্থে ভবনটি তৈরি হয়। কিন্তু একেবারে সমুদ্রের পাশে হওয়ায় সবসময় জলোচ্ছ্বাসের দাপট ও নোনা হাওয়ায় ভবনটির অবস্থা ক্রমশ বেহাল হতে শুরু করে। ২০২০ সালে উম-পুন ঘূর্ণিঝড়ের জেরে জলোচ্ছ্বাসে ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছিল। ২০২১ সালে যশ ঘূর্ণিঝড়ের জেরে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে এই ভবনটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর আর ভবনটি মেরামত তো হয়নি, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকতে শুরু করে। এই সুযোগে দিনের পর দিন দুষ্কৃতীরা দরজা-জানালার কাঠামো, বিদ্যুতের সুইচবোর্ড, তার, সিলিং ফ্যান, লোহালক্কড় থেকে শুরু করে নানা দামি সামগ্রী খুলে নিয়ে যেতে শুরু করে। বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে পানীয় জল, শৌচালয়ের ব্যবস্থাপনা নষ্ট করে দেয়। প্রতিদিনই রাতে ফাঁকা ঘরে দুষ্কৃতীদের আড্ডা বসে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
পাশেই রয়েছে জলধা হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক মাইতি বলেন, চোখের সামনে কোটি কোটি টাকায় তৈরি হওয়া বিল্ডিং কার্যত পড়ে পড়েই নষ্ট হচ্ছে। জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। এই শেল্টার হাউসটি মেরামত করে কাজে লাগানো হোক। একই দাবিই জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণচন্দ্র বেরাও। জলধার পঞ্চায়েত সদস্য তপন বড়াই বলেন, ভবনটি এখন কোনও কাজেই লাগছে না। অথচ, পাশেই চাঁদপুরে শেল্টার হাউসে ‘ডানা’ ঘূর্ণিঝড়ের জেরে অদ্ভুত পরিস্থিতিতে অনেকেই ছিলেন। আর এখানে শুনশান অবস্থা। একেবারে সমুদ্রতীরে সেন্টারটি তৈরি করার আগে প্রশাসনের বিবেচনা করা উচিত ছিল। এই পরিস্থিতিতে ভবনটি সামগ্রিকভাবে সংস্কার করে আগের মতো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক। আমরা প্রশাসনের কাছে সেই দাবিই জানিয়েছি। এবিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাইচরণ সার বলেন, আমরা বিষয়টি জানি। ঝড়-বৃষ্টি জলোচ্ছ্বাসের সময় উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন এখানে এসে থাকতেন। কিন্তু ভবনটি বর্তমানে বেহাল থাকার জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না। সেকথা মাথায় রেখেই ভবনটি ফের মেরামতির উদ্যোগ নেওয়া হবে।-নিজস্ব চিত্র