ভীমপুরে বন্দুক হাতে মস্তানি তৃণমূল নেতার, দলীয় নেতাকে শাসিয়ে গ্রেপ্তার
বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: টাকা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে দলেরই কর্মীর উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হল তৃণমূল নেতা। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ভীমপুর থানার আসাননগর এলাকায়। মদ্যপ অবস্থায় স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মস্তানি করতে দেখা যায় ওই তৃণমূল নেতাকে। তাঁর নাম হিরণ মণ্ডল। যদিও বর্তমানে তিনি কোনও পদ নেই। তবে এলাকার সক্রিয় তৃণমূল নেতা বলেই পরিচিত। অভিযোগের ভিত্তিতে ভীমপুর থানার পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার অভিযুক্তকে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের পুলিসি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। জানা গিয়েছে, ধৃত হিরণ বর্তমানে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বছর কয়েক আগে বিজেপি করতেন। পঞ্চায়েত ভোটের পর আসাননগর এলাকায় ‘পদহীন’ তৃণমূল নেতা হিসেবে উঠে আসেন তিনি।
কৃষ্ণনগর-১ ব্লকের উত্তর বিধানসভার ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘হিরণ মণ্ডল দলের কোনও পদে নেই। তবে এলাকায় তৃণমূল করতেন। তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। এই ধরনের অপরাধ দল কোনওভাবেই বরদাস্ত করে না। এতে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হবে। পুলিস আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। আমরা তাঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত তৃণমূল নেতা হিরণ মন্ডল দীর্ঘদিন ধরে পুলিসের নজরে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে ভীমপুর থানায়। কয়েক বছর আগে ভীমপুরের এক তৃণমূল নেতাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার জন্য জেল খেটেছিলেন তিনি। তখন হিরণ বিজেপি করতেন। পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে তৃণমূল শিবিরে নাম লেখান। শাসকদলের ছত্রছায়ায় পুলিসের হাত থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন হিরণ। সম্প্রতি ভীমপুর এলাকার স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে হিরণের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে ঘাসফুল শিবিরের ব্যানারেই বাড়তে থাকে তাঁর মস্তানি। আসাননগর এলাকার স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি কনক বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ হলেন হিরণ। অঞ্চল সভাপতির বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত সুজিত বাগের উপর শনিবার রাতে হিরণ আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। অঞ্চল সভাপতি বলেন, ‘দলের অনেকেই তৃণমূল করেন। কিন্তু কেউ অপরাধ করলে দল তাঁর পাশে থাকে না। পুলিস এক ঘন্টার মধ্যেই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।’
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার বিকেলে। নাইকুড়া এলাকায় সবজি বাজারে গিয়েছিলেন সুজিত। সেইসময় স্বরূপ মণ্ডল ও হিরণ মণ্ডল তাঁর ওপর চড়াও হন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। সুজিত প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর করা হয়। প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে গলাও টিপে ধরে বলে অভিযোগ। সন্ধ্যার দিকে সুজিত ভীমপুর থানায় অভিযোগ করতে যান। অভিযোগ করে ফেরার পথে তিনি জানতে পারেন, হিরণ মদ্যপ অবস্থায় তাঁর বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছে। হাতে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। সেইমতো এলাকার এক ব্যক্তিকে লুকিয়ে হিরণের আস্ফালনের ভিডিও বানাতে বলেন। সেই ভিডিওতে (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি বর্তমান) দেখা যায়, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হিরণ রাস্তার উপরে ঘোরাঘুরি করছেন। সুজিতের বাড়ির লোককে শাসাচ্ছে। বাড়ির কাছাকাছি যেতেই ধারাল অস্ত্র নিয়ে সুজিত বাগকে তাড়া করে বলে অভিযোগ।
এব্যপারে সুজিত বলেন, ‘আমরা তিনজনই তৃণমূল করি। ও আমার থেকে টাকা চাইছিল। আমি সেটা দিতে পারিনি। যার জন্যই আমাকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাড়া করেছিল। আমি চাই ওদের শাস্তি হোক। কনক বিশ্বাসের নেতৃত্বে ওরা প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে এরকম করে।’ - নিজস্ব চিত্র