সিনেমার কায়দায় মাটিগাড়ায় ঘাঁটি গেড়ে মাদক পাচার, সাত মাসে বিপুল কারবার
বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: হিন্দিতে ডাব করা সাউথের সিনেমা ‘চক্র কে রক্ষক’-এ দুই ভাইকে নিয়ে চুরির গ্যাং তৈরি করেছিল দাবার কোচ ‘লিলি’। পুলিসকে ঘোল খাইয়ে একের পর এক চুরির অপারেশন চালায় সে। রূপালি পর্দার সেই গ্যাংয়ের মতো মাটিগাড়ার আর এক অপরাধ চক্রের হদিশ পেয়েছে পুলিস। অবশ্য এখানকার যুবতী চুরির গ্যাং তৈরি করেনি। দিনমজুরের বেশে সে ভাইকে নিয়ে মাদক পাচারের গ্যাং তৈরি করেছে। যার বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। এক সপ্তাহ ধরে তাকে শিলিগুড়ির পুলিস খুঁজছে। পুলিস ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সাত মাসে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকার মাদক কারবার করেছে সেই যুবতী।
শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার (পশ্চিম) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ইতিমধ্যে ওই গ্যাংয়ের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে মাদক কারবারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। শহরের মাটি থেকে কারবারের শিকড় উপড়ে ফেলার চেষ্টা চলছে।
২৭ অক্টোবর মাটিগাড়ার তুম্বাজোতের জোড়া ব্রিজের কাছে অভিযান চালিয়ে ২০ লক্ষ টাকার ব্রাউন সুগার সহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। তদন্তে নেমে পুলিস চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে।
পুলিস জানিয়েছে, ঘটনায় ধৃত কৃষ্ণ বর্মনের দিদি গ্যাংয়ের মাস্টারমাইন্ড। তার বাড়ি কোচবিহার জেলার মাথাভাঙায়। সাত মাস আগে রানাবস্তিতে দিনমজুরের বেশে বাড়িভাড়া নেয়। সে কখনও অন্যের দোকানে কাজ করত, আবার কখনও সেলসের কাজ করত। সে জিন্স, টি-শার্ট, চুড়িদার পরতে অভ্যস্ত। এর আড়ালে সে মাদক কারবারের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল। যার সঙ্গে মালদহ, মুর্শিদাবাদের মাদক সিন্ডিকেটের সংস্রব রয়েছে। জেলাগুলি থেকে মাদক আমদানি করে সে স্থানীয় এলাকার পাশাপাশি কোচবিহারের মাথাভাঙা, সিতাই, শীতলকুচি প্রভৃতি এলাকায় ছড়াত। নিজের ভাইয়ের মাধ্যমে সে এই কারবারের জাল বিস্তার করত। কৃষ্ণ গ্রেপ্তার হওয়ার পরই সে গা ডাকা দেয়। ইতিমধ্যে তার খোঁজে শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত ও কোচবিহারে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিস। ঘটনাটি নিয়ে অনেকেই বলছেন, বেশকিছু চুরির ঘটনা নিয়ে সাউথে একটি সিনেমা তৈরি হয় ‘চক্র কে রক্ষক’। তাতে চুরির গ্যাংয়ের মাস্টারমাইন্ড ছিল এক মহিলা। সে দাবার কোচ। ভাইদেরকে নিয়ে সে চুরির গ্যাং তৈরি করেছিল। সিনেমার সেই কাহিনীর সঙ্গে মাটিগাড়ায় মাদক কারবারের গ্যাংয়ের অনেকটাই মিল রয়েছে। এখানে গ্যাংয়ের মাস্টারমাইন্ড ফেরার যুবতী দিনমজুরের বেশে থাকত। আর তার ভাই থাকত টোটো চালকের বেশে। সে দিদির কথামতো মাদকের কনসাইনমেন্ট এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পাচার করত। পুলিস অফিসাররাও বলেন, সম্ভবত পুলিস ও গোয়েন্দাদের নজর এড়াতেই ভাইকে নিয়ে বিভিন্ন বেশে ওই গ্যাং গড়েছে ফেরার যুবতী।