• ছটপুজোর বিক্রিতেই সারাবছর ধরে পাঁচজনের সংসার চলে সনাতনদের
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, কুলো, ডালা ছাড়া কার্যত পূর্ণতা পায় না আস্থার ছটপুজো। আর বাঁশের সেই সামগ্রী সারাবছর ধরে তৈরি করে নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারের হাল ধরেছেন সুভাষগঞ্জের সনাতন দাস ও তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা। 

    টিনের চাল দেওয়া ঘরে কোনওমতে নিজেরা মাথা গুঁজে থাকলেও যত্ন সহকারে সারাবছর ধরে নিজেদের হাতে তৈরি ঝুড়ি, কুলো, ডালাগুলিকে সুরক্ষিতভাবে মজুত রাখেন। কারণ সেগুলি ব্যবহার হবে ছটপুজোয়। তা বিক্রি করেই চলবে সংসার।  একসময়ে রোজগারের টানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কেরলে চলে যান সনাতন। সেখানে বাঁশের ঝুড়ি, কুলো সহ বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করতেন। কিন্তু বাবা, মা ও সংসারের টানে সুভাষগঞ্জে ফিরে আসেন। তারপর থেকে ঘরে বসেই সারাবছর ছট পুজোর জন্য ঝুড়ি, কুলো, ডালা তৈরি করেন। সঙ্গে একই কাজ করেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা নীরেন দাস ও মা সবিতা দাস। দাস পরিবার সম্মিলিতভাবে এবার হাজার খানেক ঝুড়ি, কুলো, ডালা তৈরি করেছে। যেগুলি ৫০ থেকে ৫০০ টাকায় রায়গঞ্জের বিভিন্ন বাজারে বিকোয়। চুয়াল্লিশ বছর বয়সী সনাতন দাসের কথায়, মা বাবার থেকেই বাঁশের কাজ শিখেছি। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে এই কাজে কমছে দক্ষ কারিগরের সংখ্যা। কিন্তু আমরা এই কাজটা ধরে রেখেছি। সনাতনের সংযোজন, ছটের সময়টাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সারাবছরের মূল রোজগারটা হয় ছটপুজোর সময়েই। তার উপর নির্ভর করে আমাদের পরিবারের দিন গুজরান। বিষয়টা খোলসা করলেন সনাতন। বললেন, মানুষ এখন একমাত্র  ছটপুজোর  কাজের জন্য বাঁশের ঝুড়ি, কুলো, ডালা কেনেন। বছরের অন্যান্য সময়ে তেমন বিক্রি হয় না বাঁশের এই সামগ্রী। 

    সনাতনরা জানালেন, ছটপুজোয় কাচ বা স্টিলের কোনও সামগ্রী ব্যবহার হয় না। শুধুমাত্র পিতল, কাঁসা আর বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার হয়। বৃদ্ধ নীরেন জানালেন, বাঁশের এই কাজ খুব পরিশ্রমের। পুরোটা হাতে তৈরি হয়। তবে সনাতনের আক্ষেপ, বাঁশের দাম চারশো টাকা ছুঁয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের আশা, তৈরি করা সামগ্রীগুলি যথাযোগ্য দামে বিক্রি হোক। (ছটপুজোর আগে বাঁশের বাতা দিয়ে চলছে ঝুড়ি, কুলো তৈরির কাজ। -নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)