• মেদিনীপুরের উপ নির্বাচনে ‘ডুমুরের ফুল’ দিলীপ-ঘনিষ্ঠ বিজেপির জেলা সভাপতি
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
  • পিনাকী ধোলে, মেদিনীপুর: লোকসভা নির্বাচনের সময় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দলের অন্দরে। উপ নির্বাচনেও বিজেপির জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিতের ভূমিকা আতস কাচের তলায় ফেলতে শুরু করেছেন দলের কর্মীরাই। কর্মীদের অভিযোগ, উপ নির্বাচনে দলের ‘সেনাপতি’ হয়ে যেখানে তাঁর লড়াইয়ের ময়দানে থাকার কথা, কর্মীদের মনোবল জোগানোর দায়িত্ব, সেখানে তিনিই কার্যত ‘ডুমুরের ফুল’ হয়ে গিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে না প্রচারে। 

    গত ২০ অক্টোবর প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে মেদিনীপুর বিধানসভায়। বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায়কে (বান্টি) জেতাতে প্রচারও শুরু করেছেন বিজেপি কর্মীরা। যদিও বিজেপির নেতা কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, প্রার্থীর হয়ে সেইভাবে প্রচার করতেই দেখা যাচ্ছে না সুদাম পণ্ডিতকে। এমনকী প্রার্থীর হয়ে ভোটের আবেদন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা পোস্ট পর্যন্তও করতে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু নিয়ম করে দুর্গাপুজো, কালীপুজো নিয়ে পোস্ট কিংবা কাঁথির বর্ষীয়ান নেতা শিশির অধিকারীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি জেলা সভাপতি। আর এনিয়েই তাঁর উপর ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছেন দলেরই একাংশ। বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ। 

    বছর খানেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সুদাম পণ্ডিতকে যখন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়, তখনই ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছিল বিজেপির অন্দরে। তারপর থেকেই দিলীপ ‘ঘনিষ্ঠ’ এই নেতার ভূমিকা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বিজেপি কর্মীদের একাংশের দাবি, শুরু থেকেই গা ছাড়া মনোভাব ছিল জেলা সভাপতির। দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী না করায়, তা আরও প্রকট হয়। তাঁর নেতৃত্বে লোকসভায় ভরাডুবি হয় অগ্নিমিত্রা পলের। এনিয়ে জেলা সভাপতির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন অগ্নিমিত্রা অনুগামীরা। অভিযোগ জমা পড়ে রাজ্যে। যদিও, তারপর থেকেও পরিস্থিতির বদল হয়নি এতটুকুও। 

    বিজেপির সূত্রের খবর, মেদিনীপুরের বিজেপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন রয়েছে। একদল দিলীপ ঘোষের অনুগামী, অন্যদল বিরোধী দলনেতার। লোকসভার মতো উপ নির্বাচনেও প্রার্থী নির্বাচনে বিরোধী দলনেতার মতই গুরুত্ব পেয়েছে। বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায় তাঁরই অনুগামী। সেই কারণেই কি জেলা সভাপতির এই হাবভাব? নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মেদিনীপুর শহরের বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘জেলা সভাপতি আদৌ কি চান যে প্রার্থী জিতুন? মাঝেমধ্যে পার্টি অফিসে আসছেন, বসছেন, চলে যাচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে ভোটে জিতব, তাই নিয়ে কোনও আলোচনা পর্যন্ত করতে দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। প্রার্থীর হয়ে প্রচারেও ঝাঁপাচ্ছেন না। যখন কোনও হেভিওয়েট নেতা আসছেন, একমাত্র তখনই তাঁকে দেখা যাচ্ছে!’ আর এক নেতার বক্তব্য, ‘লোকসভায় একবারে দায়িত্ব নিয়ে ডুবিয়েছেন। এবারও মনে হচ্ছে উপ নির্বাচনে ডোবাবেন। রাজ্য নেতৃত্ব কী দেখে তাঁকে এখনও জেলা সভাপতি রেখেছেন, কে জানে।’ এনিয়ে সুদামবাবু অবশ্য বলেন, ‘প্রার্থীর পিছনে পিছনে ঘোরা কি জেলা সভাপতির একমাত্র কাজ? তার বাইরেও অনেক কাজ থাকে। সেসব সামলাতে হয়।’ যাঁরা এধরনের কথা বলছেন, তাঁরা দলের লোক হতে পারে না বলেও অভিযোগ জেলা সভাপতির।

    এনিয়ে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ রফিক বলেন, নিজেদের মধ্যে কোন্দলেই বিজেপি শেষ হয়ে যাবে। লোকসভার মতো উপনির্বাচনেও বিজেপি পর্যুদস্ত হবে। সুজয় হাজরা কমপক্ষে ৪০ হাজার ভোটে জিতবেন।
  • Link to this news (বর্তমান)